খুমেক হাসপাতালে আউটসোর্সিং এর বেতনের তিন ভাগ নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-১১ - ১০:৫৬

প্রতিষ্ঠান : ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র কর্মচারী : চুক্তি অনুযায়ী মজুরি দাবি

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে আউটসোর্সিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারি নিয়োগে সরকারের কাছ থেকে জনপ্রতি (ভ্যাট-কর দিয়ে) ১০ হাজার ৪শ ৪৯ টাকা গ্রহন করলেও প্রদান করছে মাত্র সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। এর আগে দেয়া হতো মাত্র ১ হাজার ৮শ’ টাকা। এ সবের কারণে দরিদ্র কর্মচারীরা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাদের চাকরি চলে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটছে। নির্ধারিত বেতনের চেয়ে অনেক কম টাকা দেওয়ার অভিযোগ খান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
গতকাল বুধবার (১০ এপ্রিল) খুমেক হাসপাতালে নিয়োজিত আউটসোর্সিং কর্মচারিরা তাদের নায্য বেতন প্রদানের জন্য হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের কাছে অুনরোধ জানিয়েছেন।
খান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ মুজিবুর রহমান লুলু এ প্রতিবেদককে বলেন, ভ্যাট-করসহ সরকারি অন্য দপ্তরে খরচ বাদ দিয়ে তার মুল টাকার শতকরা ৪০ ভাগ খরচ হয়ে যায়। তারপর বাকি টাকা থেকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত কর্মীরাচারিদের প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আউটসোর্সি কর্মচারিদের বেতন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের কোন টাকা মেরে খাচ্ছি না।
খুমেক হাসপাতালে সূত্রে জানায়, সরকারি চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন  জনপ্রতি ৪৩০ টাকা প্রদান করা হয়। সে হিসেবে মাসে বেতন হেেচ্ছ ১২ হাজার ৯শ টাকা। এর থেকে সরকারকে শতকার ১৫ ভাগ ভ্যাট ও ৪ ভাগ কর বাদ দিয়ে জনপ্রতি কর্মচারি বেতন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সরকার দিচ্ছে ১০ হাজার ৪৪৯ টাকা।
আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত মোঃ আলাউদ্দিন বুধবার খুমেক হাসপাতালে এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত যারা ছিলেন তখন তাদের দেয়া হতো মাত্র ১ হাজার ৮শ’ টাকা। এভাবে প্রায় কয়েক বছর বেতন দিতো। ওই সময় ঈদ বোনাস দিতো মাত্র ২শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা। বেতন বৃদ্ধি দাবি জানিয়ে আসার কারণে বর্তমানে দিচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। ওই কর্মচারির দাবি আমরা গাধার মতো কাজ করেই যাবো কিন্তু আমাদের ন্যায্য বেতন পাবো না। এটা চরম অন্যায়। আমাদের তো সংসার আছে। আমাদের ন্যায্য বেতন পাওয়ার দাবিতে হাসপাতালের তত্ত্বাধায়কের কাছে দাবি জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাদের বেতন বিষয়ে কথা বলেছি। তারা ন্যায্য বেতনটা যেনো পায়। এছাড়া সকল আউটসোর্সিয়ে বেতন চেকের মাধ্যমে দেয়ার জন্য নির্দেশনাও দিছি।
খুমেক হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রয়োজনের তাগিদে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপার পদে ৩০ জন লোকের প্রয়োজন। হাসপাতালের চুক্তি অনুযায়ী খান এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ২০ জন সুইপার ও ১০ জন গার্ড নিয়োগ দেন। বর্তমানে কার্যাদেশ অনুযায়ী জনপ্রতি শ্রমিকরা প্রতিদিন ৪৩০ টাকা করে মজুরি পাবেন। সেই অনুযায়ী মাসিক বেতন দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯শ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী বেতন না দিয়েই জনপ্রতি ক্লিনারকে দিচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আর সিকিউরিটি গার্ডদের দিচ্ছে ৪ হাজার টাকা বলে নিয়োজিত আউটসোর্সিং কর্মীরা জানান।
আউটসোর্সিংয়ে চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অভিযোগ, এই চাকরিতে যে বেতন দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। তারা যেকোনো সময় চাকরি চলে যাওয়ার আতঙ্কে থাকেন। নিম্ন বেতন ও চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে তারা কাজে মনোযোগী হন না। যার কারণে কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।