খুমেক হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ অপ্রতুল : অধিকাংশ রোগীই বাইরে থেকে কিনছেন

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-২০ - ১৭:৪৬

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে রোগীর সংখ্যার তুলনায় হাসপাতালটিতে ওষুধের পরিমাণ অপ্রতুল। প্রায় অধিকাংশ রোগীকেই বাইরে থেকে বেশি দামে ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারীর ওষুধ বাইরে বিক্রি করে টু-পাইস কামানোর ধান্দা। আবার ফার্মেসিগুলো ন্যায্যমূল্য রাখছে কি না তাও দেখার কেউ নেই। ফলে ওষুধ কিনে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। এ যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’।
গত কয়েকদিনে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভর্তি রোগীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মোঃ আনোয়ার (৩৭)। পেশায় ইজিবাইক চালক এই ব্যক্তি একশিরা অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন খুমেক হাসপাতালে। আনোয়ার বলেন, অপারেশনের দিন ওষুধ বাবদ তার সাড়ে ৩ হাজার খরচ হয়েছে। এরপর এ পর্যন্ত তাকে ২০ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। একেকটি ইনজেকশনে ২শ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ টাকায় কিনে আনা লাগছে, সেই সাথে স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধ তো আছেই।
অপর রোগী পীর আলী মিস্ত্রি। তিনি বলেন, দুই একটা ওষুধ ছাড়া বাকি সবই ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনা লাগছে। প্রতিবেশীদের কথায় সরকারি হাসপাতালে কম খরচের মধ্যে সেবা পাবো। কিন্তু সব টাকা ওষুধ কিনতে কিনতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। তাহলে এখানে এসে লাভ কি হলো।
জানা গেছে, খুমেক হাসপাতালে রোগীর চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ অপ্রতুল। প্রতিদিন সাড়ে ৯শ থেকে ১১শ রোগী পর্যন্ত ভর্তি থাকেন। ফলে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকার কারণে অধিকাংশই রোগীকে দামি ইনজেকশন ও ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। ওষুধ সরবরাহ কম থাকার সুযোগে খুমেক হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারী কৌশলে সরকারি ওষুধ চুরি করে বাইরে বিক্রি করছেন।
খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মামা আবুল বাশার জানান, ভেতর থেকে কিছু ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়ার পরও অপারেশনের জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। শুধু যে অপারেশনেই ওষুধ কিনতে বেশি টাকা লাগছে তা নয়, অনেক সময় অপারেশন ছাড়াও রোগীদের চড়া দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফার্মেসীগুলোতে যখন ক্রেতা ওষুধ কেনেন, তখন ওই ওষুধের দাম ধরা হয় ইচ্ছেমতো। ওষুধের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি ধরা হচ্ছে কী না বোঝার উপায় নেই রোগী ও তার স্বজনের পক্ষে।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, প্রতিদিন সাড়ে ৯শ এর ওপরে রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। সেই তুলনায় হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ অপ্রতুল। এ হাসপাতালের যাতে রোগীর চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ পর্যাপ্ত পাওয়া যায় সেই ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করা হবে।
খুমেক হাসপাতালের স্টোর কিপার মোঃ শরিফুর রহমান বলেন, রোগীর চাহিদার তুলনায় এ হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ অপ্রতুল। সব ধরনের ওষুধই হাসপাতালে সরবরাহ আছে, তবে রোগীর তুলনায় সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। ওষুধের ফান্ডে টাকা বরাদ্দ কম থাকায় ওষুধের সঙ্কট লেগেই আছে। তবে হাসপাতালের সার্জিক্যালের আইটেমগুলো পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কোন ঘাটতি নেই।
হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ১৯ মার্চ সকাল ৭টা পর্যন্ত ৯৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ বেডে পুরুষ রোগী ৩৭৭ জন ও মহিলা রোগী ৪১৫ জন ভর্তি ছিলো।