খুলনার চুকনগর আছানিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভূয়া পরীক্ষার্থী আটক

প্রকাশঃ ২০১৮-০২-২০ - ১৯:১৭

ডুমুরিয়া(খুলনা)প্রতিনিধি: ২০হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে শফিকুর রহমান নামে এক কিন্ডার গার্টেন স্কুল শিক্ষককে আটক করেছে থানা পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর আছানিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার টিপনা আঙ্গারদোহা দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র ও রানাই গ্রামের শেখ আশরাফ আলীর ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিকি গত বছর দাখিল পরীক্ষা দেয়। কিন্তু সে ৪টি বিষয়ে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। চলতি বছর পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় হলে আবু বক্কার ফেল করার ভয়ে আর পরীক্ষা দিবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মাদ্রাসা সুপার বায়েজিদ হোসাইন আবু বক্কারের পরীক্ষায় নিশ্চিত পাশ করিয়ে দেয়ার প্রোলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। আর আবু বক্কার সিদ্দিকির হয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার জন্যে সুপার বায়েজিদ হোসাইন তার বাড়ির গৃহ শিক্ষক এবং তার মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ও ¯হানীয় চুকনগর সানরাইজ মডেল একাডেমির শিক্ষক শফিকুর রহমানের সাথে ২০হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার ব্যব¯হা করেন। মাদ্রসা সুপার বায়েজিদ হোসাইন চুকনগর আছানিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষার হল সুপারের দায়ীত্বে থাকায় তিনি অন্যান শিক্ষকদের সহযোগিতায় এহেন জঘন্য অপকর্ম করে যাচ্ছিলেন। ইতোমধ্যে ৪ টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে শফিকুর রহমান ৩টি বিষয় প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ইসলামের ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালিন পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়ীত্বে থাকা কর্মকর্তা বৃন্দ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেন্দ্রে ১১২ নাম্বার কক্ষে যেয়ে ১৯৯২২৬ নাম্বার রোল ধারী পরীক্ষার্থী আবু বক্কার সিদ্দিকিকে খুজতে গেলে বিষয়টি টের পেয়ে শফিকুল ইসলাম দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।এ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে ফেলে। ধৃত প্রক্সি পরীক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান, তার বাড়ি বরগুনা জেলায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুপার বায়েজিদ হোসাইনের নিজ গ্রাম রোস্তমপুর গ্রামে থেকে ¯হানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষাকতা করেন। এছাড়া তিনি আরো জানান ইতোপূর্বে তিনি চট্রগ্রামের হাট হাজারি মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদীস পাশ করে গত বছর টিপনা-আঙ্গার দোহা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছেন। মাদ্রাসা সুপার বায়েজিদ হোসানাইনের প্ররোচনায় ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে তিনি আবু বক্কারের হয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। জানতে চাইলে পরীক্ষার্থী আবু বক্কার সিদ্দিকি জানান, তিনি পরীক্ষায় পাশ করবে না জেনে বুঝে পরীক্ষায় ফরম ফিলাপ করতে চাননি। কিন্তু সুপার বায়েজিদ হুজুর আমাকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন না করে পাশ করিয়ে দেয়ার গ্যারান্টি দিয়ে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে শফিকুর রহমানকে দিয়ে আমার প্রক্সি পরীক্ষা দিয়াচ্ছেন। এত টাকা দিয়ে কেন তুমি পরীক্ষায় পাশ করতে চাইছো এমন প্রশ্নের জবাবে আবু বক্কার জানায়, সে খর্নিয়া বাজারের একজন ব্যবসায়ী। সে তার নিজের নামে একটি ব্যবসায়ীক লাইসেন্স করতে দাখিল পাশ একটি সার্টিফিকেট দরকার তাই সে এত টাকা দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে সুপার বায়েজিদ হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ঐ পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার হওয়া সত্বেও আপনার প্রাক্তন ছাত্র শফিকুর রহমান অপর ছাত্র আবু বক্কারের হয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছি আপনি তা জানেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান পরীক্ষা কেন্দ্রে তিনি শুধু প্রশ্ন পত্র ও খাতা পত্রের নিয়ন্ত্রন করেন। কোন হলে তিনি যান না। তাই বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানা। পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও আহছানিয়া মাদ্রাসার সুপার স’ ম শাহীন কাদির বলেন, পরীক্ষার্থী আবু বক্কার সিদ্দিকিকে বহিস্কার করা হয়েছে।এবং ভূয়া পরীক্ষার্থী শফিকুর রহমানকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। খবর পেয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ আশেক হাসান ও থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ হাবিল হোসেন মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেন্দ্র সচিবকে ধৃত শফিকুর রহমানসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইনে থানায় একটি মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।