ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার ফুলতলায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের গুলিতে মিলন ফকির (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। এ সময় শীতল কান্তি মন্ডল (৫০) নামে অপর এক স্কুল শিক্ষক আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে সোমবার সকাল ৮টায় ফুলতলার জামিরা সড়কের আলকা আইডিয়াল স্কুল মোড়ের মা টেলিকম এন্ড কনফেকশনারীর সামনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তলের ৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। খুলনার পুলিশ সুপার মাহাবুব হাসান, সিআইডির টিম, ডিবি, পিবিআই ও র্যাব-৬ এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত মিলন নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পেড়োলী গ্রামের আঃ ওহাব ফকিরের পুত্র এবং বর্তমান আলকা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। তার স্ত্রী, ফুলতলা রি-ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির জিসান হোসেন ইমন (২০), ৮ম শ্রেণীর রাফিদ হোসেন মিম্মাজ (১৪) এবং করিমুন্নেছা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী তাসমিয়া হোসেন মিলি (১৬) রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে মিলন ফকির ও স্কুল শিক্ষক শীতল কান্তি মন্ডল দু’জনে আইডিয়াল স্কুল মোড়ে দাড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় জামিরাগামী লাল রঙের পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে অজ্ঞাত দুই যুবক ওই স্থানে দাড়ায়। পিছনে বসে থাকা যুবক মোটরসাইকেল থেকে নেমে মিলনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তিনি দৌড়ে মা টেলিকোম এন্ড কনফেকশনারীর দোকানে প্রেবশ করে। অস্ত্রধারী যুবক সেখানে গিয়ে মিলনের মাথা ও বুকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে ওই মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত জামিরা অভিমুখে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ব্যবসায়ী মিলনের মৃত্যু ঘটে। এ সময় বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ স্কুল শিক্ষক শীতল কান্তি মন্ডলকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
মিলনের পারিবারিক সূত্র জানায়, তার বড় ছেলে ফুলতলা রি-ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র জিসাম হোসেন ইমন (২০) এবং তার এক আত্মীয় মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য মিলন এসে তাদেরকে ঢাকার বাসে তুলে দেয়। পরে ফজরের নামাজ পড়ে অন্যান্য দিনের মতো হাটাহাটি করে সকাল সাড়ে ৭টার সময় চা খাওয়ার জন্য আইডিয়াল স্কুল মোড়ে আসে।
মিলনের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৩৮) বলেন, ফুলতলা উপজেলার শিকিরহাট, রানাগাতি ও কালিয়া উপজেলার পেড়োলী ঘাটের ইজারা নেয়ার জন্য দরপত্র সংগ্রহ করেন। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আজ সোমবার দরপত্র জমা দেয়ার কথা ছিল। গত হাটের দিন ঘাটের বর্তমান ইজারাদার ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন মোল্যা তাকে একটি মুরগী কিনে দেয় এবং শিকিরহাট ঘাটের দরপত্র জমা না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে আলমগীর মোল্যা ও ইউপি সদস্য ফারুক মোল্যা দরপত্র জমা না দেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে অনুরোধ জানাতে থাকেন।
নিহতের পিতা আব্দুল ওহাব ফকির বলেন, আমার জানা মতে মিলনের কোন শত্রু ছিল না। ঘাট ইজারাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমার ধারনা।
অপরদিকে সাবেক ইউপি সদস্য ও শিকিরহাট খেয়াঘাটের ইজারাদার মোঃ আলমগীর হোসেন মোল্যা বলেন, মিলন তার নিজ এলাকা পেড়োলী খেয়াঘাটের ইজারা নেয়ার জন্য দরপত্র সংগ্রহ করেছেন। আমার জানা মতে তিনি এবার শিকিরহাট খেয়াঘাটের ইজারা নিচ্ছেন না।
প্রত্যক্ষদর্শী মা টেলিকোম কমিউনিকেশন দোকান ঘর মালিক রফিকুল ইসলাম সোহেল জানান, প্রতিদিনের মতো দোকান খুলে কিছু মালামাল সাজাতে থাকি। এ সময় হঠাৎ গুলির শব্দে দেখি মিলন দৌড়ে আমার দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুর্বৃত্তরা কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ওসি মোঃ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, সংবাদ পেয়ে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।