খুলনার সরকারি হাসপাতালে নষ্ট হচ্ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম

প্রকাশঃ ২০২৩-০১-১৫ - ১৬:১১

খুলনা : খুলনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দক্ষ জনবল অভাবে ব্যবহার হচ্ছে না উন্নতমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম। দিনেদিনে অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হতে বসেছে এসব  চিকিৎসার মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে  দক্ষিণ জনপদের লাখ লাখ মানুষ। হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম আর জনবল পদায়নের ভাগ্য।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। খুলনা বিভাগে ১২ জেলার ১২টি জেনারেল হাসপাতাল ও ৭৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র থেকে এখানে রোগী রেফার করা হয়। প্রতিদিনই এ হাসপাতালের আন্ত:বিভাগে ভর্তি থাকে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগ থেকে  প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০-২০০০ রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট ডা. মো. নিয়াজ নওশেদ জানান,  প্রতুল যন্ত্রপাতি, কিছু নষ্ট, পরীক্ষার কিট, জনবল ও চিকিৎসক সংকটের কারণে সব পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের দুটি সিটিস্ক্যান মেশিনের মধ্যে একটি একমাত্র ৩০০ এমএ এক্্র-রে মেশিন, ছয়টি ল্টাসনোগ্রাফি মেশিনের মধ্যে দুটি বিকল রয়েছে। প্রায় ৮ কোটি টাকা দামের রেডিওথেরাপি বিভাগের ছয় এমভির লিনিয়ার এক্সিলেটর মেশিনটি দীর্ঘ এক যুগ বাক্সবন্দি। অপারেশন থিয়েটার সংকটে অপেক্ষায় থাকে  প্রায় ৫০০ রোগী।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুকিতুল হুদা বলেন,  ‘প্রায় এক যুগ বাক্্রবন্দি থাকায় লিনিয়ার এক্্িরলেটর মেশিনটি অকেজো হয়ে গেছে। যেসব ক্যানসার রোগীর কেমো বা সার্জারির পর টিউমার ধ্বংস করতে রেডিওথেরাপির দরকার হয়, তাদের আমরা ঢাকার হাসপাতালগুলোয় রেফার করি।’ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দেশের প্রচলিত ব্যবস্থায় চিকিৎসকরা কোন্ রোগীকে কী রোগের জন্য কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছেন, এ পরীক্ষার আদৌ  প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা দেখতে অডিট ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। ফলে একশ্রেণির চিকিৎসকের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালমালিকরা চিকিৎসায় কমিশনপ্রথা চালু করেছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান জানান, হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা  প্রায় ১ হাজার ৫০০ রোগীর পাশাপাশি বহির্বিভাগে  প্রতিদিন গড়ে  প্রায় ২  হাজার রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের জন্য নতুন একটি ছয় তলা ভবন তৈরি করা হচ্ছে। ভবনটি হয়ে গেলে পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতি মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হবে। তখন হাসপাতালের রোগীদের আর বাইরে থেকে বাড়তি সেবা নিতে হবে না। অন্যদিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হওয়ায় খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগীর ভিড় বেড়েই চলেছে। হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা জানান, বহির্বিভাগে প্রতিদিন হাজারের মতো রোগী সেবা নিতে আসেন। তবে দীর্ঘদিন াসপাতালটির আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল হয়ে আছে। যার প্রভাব পড়ছে রোগীর চিকিৎসায়। হাসপাতালটির  প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন হাসপাতালের আধুনিক বেশ কয়েকটি চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল। ব্রেন টিউমার অপারেশনের জন্য হাসপাতালের কোটি টাকা ব্যয়ে অপারেটিভ মাইক্রোস্কোপ অব নিউরো সার্জারি মেশিনটি এখনো বাক্্রবন্দি রেডিওলজি বিভাগে একটি এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল। হার্টের রোগীদের জন্য একটি ইটিটি মেশিন বিকল প্রায় দুই বছর। পাশাপাশি একটি ক্যাথল্যাব ও একটি এনজিওগ্রাম  মেশিনও বিকল।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম আমি যোগদান করার আগের থেকেই বিকল। চেষ্টা করছি সচল করার। বিকল এসব সরঞ্জাম মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক বাড়ানো হয়েছে। তবে অন্যান্য জনবল সংকট রয়েছে।’ খুলনার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। এসব হাসপাতালের পরিধি এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি বাড়ানো হলেও পর্যাপ্ত জনবল নেই। ফলে এক্স-রে, অল্ট্রাসাউন্ড ও অ্যানেসথেসিয়া মেশিনের মতো ভারী যন্ত্র দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, সরকার উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি দিয়েছে। তবে এখনো জনবল পাওয়া যায়নি। তাই অনেক মেশিনই অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়ে আছে।