ইউনিক ডেস্ক : খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং পদ্ধতির মাধ্যমে চাকরি দেয়ার নামে শুরু হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। ডিপোজিটের নামে অগ্রীম নেয়া হয় বেতনের পূর্ণ অংশ। ঠিকাদার এ অগ্রিম টাকা দিয়ে ব্যবসা করেন আর প্রতি মাসে বেতন হিসেবে টাকা প্রদান করেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে অগ্রিম দেয়া টাকা পরিশোধ হয়ে যায়। অগ্রিম টাকা দিতে না পারলে চাকুরি হয় না।
সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, কিন্তু সরকারী কর্মচারী নয়। তারা বেতন পায় সরকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে। সরকারী সংস্থা থেকে পাওয়া টাকা আর কর্মচারীকে দেওয়া টাকার পার্থক্যই হলো আউটসোর্সিং কোম্পানি মালিকের লাভ। এ কারণেই আউটসোর্সিং কোম্পানির চেষ্টা থাকে কর্মচারীদেরকে ঠকানোর। এ সবের কারণে দরিদ্র কর্মচারীরা অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন কারণে সোচ্চার হলে তাদের চাকরী চলে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটে। তাছাড়া চাকরি নিতে প্রতিজন প্রার্থীকে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষের টাকা তুলতে চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যায়। তারা আশায় থাকেন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাবার।
খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তাকবীর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইখতিয়ার হোসেন নামে একজন ঠিকাদার আউটসোর্সিং কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়েছেন। তার নিয়ন্ত্রণে ২১৪ জন কর্মচারী বিভিন্ন স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। যারা মালি, সুইপার তারা ১৬ হাজার ৬২০ টাকা এবং অন্য শ্রেণির কর্মচারিরা ১৬ হাজার ১২০ টাকা করে বেতন পেয়ে থাকেন। অভিযোগ উঠেছে গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে তাদের নিয়োগ দেয়া হলেও আজও তারা পারিশ্রমিক পায়নি। এর আগে ফারুক হোসেন নামের অপর ঠিকাদার তিন মাসের বেতন না দিয়ে চলে গেছেন।
প্রথম দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খান এন্টার প্রাইজ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সুইপার ও গার্ড মিলে ৩০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেয়। একই ভাবে কোইকা নামে একটি ডোনার প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফকে ফান্ড প্রদান করে। ইউনিসেফ সিভিল সার্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগ দেন।
জানাগেছে, নির্ধারিত বেতনের চেয়ে অনেক কম টাকা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুুজিবুর রহমান লুলু বলেন, চুক্তি মোতাবেক নিয়োগকৃত কর্মচারীদেরকে বেতন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গার্ড বেতন হিসেবে মাসিক ৫ হাজার আর সুইপার ৫ হাজার টাকা পায়। এ ছাড়া দুই ঈদে বোনাস বাবদ এক হাজার টাকা করে দেয়া হয়। তিনি বলেন, শ্রমিকদের কথা অনুযায়ী বেতন দিলে প্রতিষ্ঠানটি চালাবো কি করে। এদের আমরা বেতন পরিশোধ করি। আর সে বেতন সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে প্রায় ৬ মাস লেগে যায়।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের প্রয়োজনে সিকিউরিটি গার্ড, সুইপারসহ বিভিন্ন পদের জন্য ৩৪৩ জন লোকের প্রয়োজন হয়। চুক্তি অনুযায়ী মাছরাঙ্গা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হেমায়েত হোসেন ফারুক আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল দিতে সম্মত হয়েছেন। ইতোমধ্যে খুমেক থেকে ১০০জন নিয়োগের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, খান এন্টার প্রাইজ ২০০৮ সাল থেকে এ কাজ পেয়ে আসছিলেন। তারা শ্রমিকদের জনপ্রতি প্রতিদিন ৪২০ টাকা করে মুজুরি দিতেন। সে অনুযায়ী মাসিক বেতন হয় ১২ হাজার ৯শ’ টাকা। আউটসোর্সিং কর্মীরা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী বেতন না দিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দেয়া হয় মাসিক ৩ হাজার এবং নিরাপত্তা প্রহরীদের ৪ হাজার টাকা। তাদের অভিযোগ যে বেতন দেয়া হতো তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। তাদের যে কোন সময় চাকরি চলে যাওয়ার আতঙ্কে থাকতে হতো। নিম্ন বেতন আর চাকরীতে অনিশ্চয়তার কারনে অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তারা বলেন, প্রতিবাদ করায় ইতোমধ্যে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের কয়েকজনকে চাকরি হারাতে হয়েছে। অনেকেই বলেন, শ্রমিকের বেতনে ভাগ বসাতে তৈরী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী কোম্পানী।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৩৪৩ জন আউটসোর্সিংএ কাজ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। মাছরাঙ্গা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হেমায়েত হোসেন ফারুক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি লাভ করেন। তবে আউটসোর্সিংএ কর্মরতরা সরাসরি খুমেক থেকে বেতন লাভ করবেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র একটা অংশ লাভ করবেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, আউটসোর্সিংএ কর্মরতরা দীর্ঘ ৬ মাস বেতন পায়না। তাদের বেতনের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ফারোক হোসেন নামে একজন ঠিকাদার বারবার হাইকোটে রিট করার কারণে তাদের বেতন পেতে দেরী হচ্ছে।