খুলনা : ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য শহীদ মিনার নেই খুলনার বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেখানে মাটি, ইট, কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। তবে শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছাটুকুও অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলা ও মহানগরীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৯ টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ২৭৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শহীদ মিনার নেই ৮৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এতদিনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার না থাকার কারণ হিসেবে তহবিল ঘাটতির কথা বলছেন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তারা। তবে, শহরের বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে জায়গা সঙ্কটের কথা। খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: তৌহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে খুলনার যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোর তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর আগে খুলনার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরি করার কথা ছিল।’ তবে কোন বরাদ্দ না থাকায় স্থানীয় ভাবে একটু একটু করে শহীদ মিনারের সংখ্যা বাড়ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মাসিক সমন্বয় সভায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই রকম শহীদ মিনার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমন্বয় সভায় বলা হয়, মাঠ পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিকল্পনাবিহীন শহীদ মিনার স্থাপন করা হচ্ছে। যার ফলে বিদ্যালয়ে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এই প্রস্তাবের আলোকে শহীদ মিনারের অভিন্ন নকশা প্রণয়ন করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানে জায়গা থাকলেও উদ্যোগ নেয়া হয় না। তাছাড়া বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলাগাছ, বাশ, মাটি, কাপড় দিয়ে অস্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এখনও ভাষাদিবস নিয়ে কোন আলোচনাই হয় না। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র এদিনে সরকারি ছুটি কাটিয়ে থাকেন।