খুলনা : মজুরী কমিশন ও বকেয়া মজুরীসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে ঢাকাসহ খুলনাঞ্চলের ৭ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের ডাকে গত ২৬ নভেম্বর গেট সভায় ১২ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শ্রমিক নেতারা। সোমবার প্রত্যেক মিলে শিফটে শিফটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশর মধ্যে দিয়ে শুরু হলো এ শ্রমিক আন্দোলন।
খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম জুবিলী, খালিশপুর জুট মিল, দিঘলিয়ার স্টার জুট মিল, আটরা শিল্প এলাকার ইর্ষ্টান ও আলিম জুট মিল এবং নওয়াপাড়ার শিল্প এলাকার জেজেআই জুট মিলের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক স্ব-স্ব মিলের এ কর্মসূচি পালন করেছে।
গত ২২ নভেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ নেতাদের বৈঠকে মজুরী কমিশন ও বকেয়া মুজরীসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলে প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবন জীবিকার উৎস ও জাতীয় সম্পাদ পাট, পাটজাত পন্য সুরক্ষা এবং এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের বাঁচিয়ে রাখার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন এবং সু-বিবেচনা, বিচক্ষন উদ্যোগের সুপারিশ করে ১১ দফা দাবী উত্থাপন করেন পরিষদের নেতারা। ১১ দফা দাবীর মধ্যে মুজরী কমিশন প্রদান, ২০% মহার্ঘ ভাতা, শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরী, বেতন প্রদান, উৎপাদন বিভাগের শ্রমিকদের পুর্বের ন্যায় ৫০২ নম্বর সার্কুলার অনুযায়ী মজুরী প্রদান, সকল পাটকলে সেট-আপ’র অনুকুলে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলী শ্রমিক, কর্মচারীদের স্থায়ী করন, অবসার প্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পিএফ, গ্রাচ্যুইটি পরিশোধ, মৃত শ্রমিকদের ৩৬ মাসের বীমা সুবিদা, চাকুরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারী ও সিবিএ নেতাদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং চাকুরিতে পুনঃবহাল, খালিশপুর, দৌলতপুর জুট মিলসহ দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক পদ্ধতিতে চলা মিলগুলো রাষ্ট্রায়াত্ত অন্যান্য পাটকলের ন্যায় সুযোগ সুবিধা এবং মজুরী বৈষম্য দুর করা, পাট শিল্পকে কৃষি ভিত্তিক শিল্প হিসেবে ঘোষনা, আলিম জুট মিলের ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর সময় কালিন শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া মুজরী ও বেতন প্রদানসহ পি,এফ ট্রাষ্টি বোর্ড কর্তৃক মিল কর্তৃপক্ষ পি,এফ ফান্ড নেয়া সকল অর্থ পি,এফ ফান্ডে জমা দেয়ার দাবী জানান তারা। ইতিমধ্যে ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবী নামাটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব, শ্রম অধিদদপ্তরের শ্রম পরিচালক, বিজেএমসির সচিব সকল পাটকলের প্রকল্প প্রধানের কাছে অনুলিপি পাঠিয়েছেন পরিষদের নেতারা। এই কর্মসুচির ধারাবাহিকতায় গতকাল খুলনা অঞ্চলের ৭ পাটকেল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদেও কেন্দ্রীয় আহবায়ক সরদার মোতাহার উদ্দিন। বক্তৃতা করেন সিবিএর সাবেক সভাপতি কাওসার আলী মৃধা, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, নুরুল হক, মনিরুল ইসলাম শিকদার, রুস্তম আলী, মোঃ শাহ আলম, আঃ রহিম, মোল্য নাসির, সৈয়দ আরব আলী, আশরাফ হোসেন, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, আবুল কালাম জিয়া, মোল্যা মিজানুর রহমান, আঃ রউফ বিশ্বাস, ওমর আলী, স্টার জুট মিলে বেল্লাল মল্লিকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন আঃ মান্নান শেখ, আলিমে সভাপতিত্ব করেন সাইফুল ইসলাম লিটু। বক্তৃতা করেন আঃ হামিদ সরদার, আনোয়ার হোসেন, মজিবুর রহমান। ইর্ষ্টানে মোঃ আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, সাবেক সভাপতি হুমায়ন কবির, আঃ মজিদ মোল্যা ও জেজেআই জুট মিলে হারুন অর রশিদ মল্লিকের সভাপতিত্বে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠি হয়েছে। এদিকে টানা কর্মসূচির মধ্যে ১৩ ডিসেম্বর পালা বদলের সময় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ১৮ ডিসেম্বর রাজপথে ১ ঘন্টা অবস্থান ও মিছিল, ২০ ডিসেম্বর মিলের সামনে ও সড়কে মানববন্ধন, ২২ ডিসেম্বর খালিশপুরে শ্রমিক জনসভা, ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিতাকুন্ডে হাফিজ জুট মিলে শ্রমিক সমাবেশ, ২৫ ডিসেম্বর আমিন জুট মিলে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ, ২৭ ডিসেম্বর নরসিংদি ইউ,এম,সি জুট মিলে শ্রমিক সভা ও বিক্ষোভ, ২৯ ডিসেম্বর আবারো খালিশপুরে শ্রমিক সমাবেশ, ৩১ ডিসেম্বর ২৪ ঘন্টা ধর্মঘট পালন সমর্থনে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২ জানুয়ারী দেশের সকল পাটকলে ২৪ ঘন্টা ধর্মঘট কর্মসূচির পালন করার ঘোষনা দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।