খুলনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের ফাঁসির আদেশ

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-১৪ - ২০:০৮

খুলনা : নড়াইলের সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রভাষ রায় ওরফে হানুকে হত্যার দায়ে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ নয়জনকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবদুর রব হাওলাদার এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণাকালে সকল আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নড়াইলের সদর উপজেলার মীরাপাড়া গ্রামের মৃত মজিদ মিনার ছেলে ভদ্রবিলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাহিদুর রহমান মিনা ওরফে সহিদ (৫২) ও মো. ইলিয়াস মিনা (৫৬), সাহিদুর রহমান মিনার ছেলে মো. আশিকুর রহমান মিনা ওরফে আশিক (২২), মোশারফ মিনার ছেলে মো. রাসেল মিনা (৩০), স্থানীয় আটেরহাট গ্রামের মৃত হারান মোল্লার ছেলে এনায়েত মোল্লা (৫৩), মীরাপাড়া গ্রামের মতিয়ার মোল্লার ছেলে ইয়াসিন মোল্লা (২৪), পলইডাঙ্গা গ্রামের মুসা মিনার ছেলে মামুন মিনা (২৮), মীরাপাড়ার মৃত হাতেম মোল্লার ছেলে বাশার মোল্লা (৩০) ও মোশারফ মোল্লার ছেলে রবিউল মোল্লা ওরফে রবিউল শেখ (২৫)। রায় ঘোষণা শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রভাষ রায় ওরফে হানু বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহিদুর রহমান মিনা ওরফে সহিদ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। নির্বাচনে সাহিদুর রহমান মিনা ওরফে সহিদ জয়লাভ করে। নির্বাচনের পর চেয়ারম্যানের সমর্থকরা প্রভাষ রায়ের বাড়ি ভাংচুর করে। এ ঘটনায় প্রভাষ রায় চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তাদের হুমকিতে ভয়ে হানু পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থানীয় কুড়িগ্রাস্থ ভাড়াবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত বছরের ১ ফেব্র“য়ারি ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুজ্জামান ফকিরের সঙ্গে মোটরসাইকেল যোগে বিভিন্ন পূঁজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে মীরাপাড়া বাজারে যান হানু। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে ফারুকের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মান্নান বিশ্বাসের কথা বলছিলেন তিনি। এ খবর পেয়ে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন হানুর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা একটি ছোরা প্রভাষ রায়ের পেটে ঢুকিয়ে দেয় এবং এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে বাজারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রভাষ রায় মারা যান। এ ঘটনায় প্রভাষ রায়ের স্ত্রী টুটুল রানী রায় বাদী হয়ে ৩ ফেব্র“য়ারি  নড়াইল সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান মিনা ওরফে সহিদ, তার ভাই মো. ইলিয়াস মিনা এবং ছেলে আশিকুর রহমান মিনা ওরফে আশিকসহ নয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ২২ ফেব্র“য়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার এসআই ভবতোষ রায় নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত বছরের ১৩ জুন মামলাটি নড়াইল থেকে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ৩ জুলাই আদালত মামলার চার্জ গঠন করেন। মামলায় ১৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি শেখ এনামুল হক। আসামিপক্ষে ছিলেন রজব আলী, এস এম মুজিবর রহমান ও মঞ্জুর আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।