খুলনায় এই প্রথম পাউবো গুড়িয়ে দিলো আলোচিত প্রভাবশালীর ৩ তলা ভবন

প্রকাশঃ ২০২০-০৩-০৯ - ১৫:১৫

খুলনা অফিস :  নিস্প্রাণ আঠারোবাকী নদীর প্রাণ ফেরাতে দীর্ঘদিনপর উচ্ছেদ করা হল খুলনার তেরখাদার সীমানাবর্তী ও বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার চুনখোলার আলোচিত নদী তীরের টুকটুকির তিনতলা ভবনের অবৈধ স্থাপনা । এর ফলে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আঠারোবাকী নদী পুনঃখননে কাজ। ফলে খুলনা,বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার মনে নতুন আশা জাগাচ্ছে আঠারোবাকী নদী ।
রবিবার(৮ মার্চ) দিনগত রাতে বাগেরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করেন খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-০১ । প্রায় ৬ ঘন্টার এ অভিযানে গুড়িয়ে দেয় হয় তিনতলা ভবন।
জানা যায় ,খুলনা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত আঠারো বেঁকি নদী। এই নদী দিয়েই এক সময় খুলনা-ঢাকা লঞ্জ-ষ্টিমার চলত। নদীতে পলি পড়ে নাব্যতা হারানোর ফলে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যায় নৌযান চলাচল। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে তিন জেলার ৪ টি উপজেলার ১৩টি বিলের ৪৩হাজার হেক্টর ফসলী জমি। জলাবদ্ধতা আর স্থানীয় প্রভাবশালীদর দখলের কারণে হাজার হাজার কৃষক আজ বেকার। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ২০১৩সালের ২৯অক্টোবর একনেকে ২শ’৮১ কোটি ৯০লাখ ১৬হাজার টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড’র অধিন ভূতিয়ার বিল এবং বড়নাল-সলিমপুর-কোলাবাসুখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬সালে আঠারো বেঁকি নদীর ৫৭কিলোমিটার পুণ: খননের কাজ শুরু করে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার সীমানা সংক্রান্ত মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় নদীর ৩ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখেন কর্তৃপক্ষ। ২বছরেরও বেশী সময় পরে যৌথ পরিমাপের মাধ্যমে মতবিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ায় গত বছরের শেষ দিকে আবারও শুরু হয়েছে পুনঃখনন কাজ। সেকাজ শেষও হয়ে যায়। কিন্ত আলোচিত মোল্লারহাট উপজেলার চুনখোলায় আঠারো বেঁকি মাঝখানের টুকটুকির বাড়ি আদালতের বিভিন্ন জটিলতার কারনে উচ্ছেদে বাধার মুখে পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যেকারণে আঠারো বেঁকি নদীর সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল তিন জেলার মানুষ।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অক্লান্ত চেষ্টায় গত ৪ মার্চ বগেরহাটের আদালত বাড়িটি উচ্ছেদের করার রায় দেয়। এর পরিক্ষেপিতে মোল্লারহাটের উপজেলার চুনখোলায় তিনতলা ভবন উচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, এই কাজ সম্পন্ন হলে আঠারো বেঁকি নদী নাব্যতা ফিরে পাবে। এ এলাকায় জলাবদ্ধতা দুরিকরণের পাশাপাশি কৃষিতে আবারও ব্যপক পরিবর্তন ঘটবে। রক্ষা পাবে পরিবেশের ভারসাম্য। আশা করা যায় আগামী মে মাসে আঠারো বেঁকি নদীর পুরাপুরি সুফল পাবে তিন জেলার মানুষ।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট একটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। কিন্তু আদালতের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় নদী খাল জলাশয় রক্ষা করবে। তদারকি করবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ ব্যাপারে তারা আন্তরিক না হলে নদী রক্ষা করা যাবে না।

খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যার্নাজী বলেন, দীর্ঘদিন জটিলতার কারণে কাজে শেষ করতে দেরি হয়েছে। তবে আলোচিত বাড়িটি উচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে আবারও খনন কাজ শুরু হয়েছে। ৩০বছর পর ভরাট হয়ে যাওয়া আঠারো বেঁকি নদী আবার গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীতে মিলিত হবে। আর এর ফলে লবণাক্ততা কমে মিঠা পানির সংকট দুর হবে। কৃষি উৎপাদনে পরিবর্তন আসবে এমনটাই প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।