খুলনা : খুলনায় দুই বছর ধরে একটি স্কুলের জায়গায় দুইটি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। নগরীর নিউমার্কেটস্থ সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় পার্শ্ববর্তী সোনাডাঙ্গা আবু বক্কার খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে একই সাথে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ সকল কার্যক্রম চলছে। এতে করে নানা ভোগান্তিতে পড়েছে এই দু’টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা এ বিষয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেছেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের অভাবের মধ্যেই চলছে পাঠদান। দুই বছর অতিবাহিত হলেও কবে নাগাদ বিদ্যালয় দু’টির কার্যক্রম আলাদাভাবে শুরু হবে তা সকলের কাছেই রয়েছে অজানা।
ভবনের অভাবে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানোর ঘটনা নতুন নয়। দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে এ রকম ঘটনার কথা শোনা গেছে। তবে এবার খুলনা নগরীতে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ সকল কার্যক্রম একটি স্কুলে পরিচালিত হওয়ার ঘটনায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সূত্র জানায়, নগরীর নিউমার্কেটস্থ সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৮৭০ সালে। ১১৮ বছর পর ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়ের দো-তলা ইমারত নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৯৩ সালে তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়। ২৫ বছর পর ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে বিদ্যালয়টির সংস্কার করা হয়। অনেকদিন সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বিদ্যালয়টি একদিকে হেলে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরেছে, কোন কোন জায়গা ফেটে পড়ছে। ছাদের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে নিচে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ভূমিকম্পের কারনে বিদ্যালয়টি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো নিরাপদ নয়। যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্যত্র ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছে বলে জানায় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা।
সূত্র আরও জানায়, সংস্কারের অভাবে অনেক আগেই বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে ২০১৫-১৬ সালে বারবার ভূমিকম্পের কারণে বিদ্যালয় ভবন একদিকে হেলে পড়েছে। এতে নতুন করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে নানা শঙ্কার সৃষ্টি হওয়ায় এ ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিরত রাখা হয়েছে। তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য সেখান থেকে পাঠদান বিরত রাখতে বলেছে শিক্ষা অফিস।
এমতাবস্থায় ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি সদর থানা শিক্ষা অফিসার বরাবর বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে পার্শ্ববর্তী সোনাডাঙ্গা আবুবক্কর খান আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করার আবেদন করেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। পরে সহকারী শিক্ষা অফিসার মোছাঃ কামরুন্নাহার হাছিনা বানু বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। ওই সময় বিদ্যালয়টির বাথরুমের ছাদ নিচে ধসে পড়ে। এরপর শিক্ষিকাদের আবেদন সাড়া দিয়ে সদর থানা শিক্ষা অফিস অন্যত্র ক্লাস করানোর অনুমতি দেন। তাতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে দুই স্কুলেরই শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে সোনাডাঙ্গা আবুবক্কর খান আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে প্রতিদিন দুই শিফটে দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ এ বিদ্যালয়েও নেই। চারটি কক্ষের মধ্যেই দুই স্কুলের ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। তাতে এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে ক্লাস করাতে হচ্ছে।
তবে সোনাডাঙ্গা আবুবক্কর খান আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী হাওলাদার জানান, শিক্ষা অফিসের নির্দেশেই আমাদের স্কুলে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত অপর বিদ্যালয়টির সংস্কার করা না হয় ততদিন এখানেই দুই স্কুলের ক্লাস করানো হবে।
সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা রানী ঘোষ জানান, আমাদের বিদ্যালয়টি হেলে পড়ার কারণে আমরা বিদ্যালয় স্থানান্তরের আবেদন করি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের স্কুলের ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। ভূমিকম্পে আতংকিত হয়ে আর শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা অন্য স্কুলে ক্লাস করাচ্ছি।
এ ব্যাপারে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারভীন জাহান বলেছিলেন, বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কারের জন্য আমরা মেরামত তালিকায় এ বিদ্যালয়ের নাম পাঠিয়েছি। স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যবস্থা নিলেই এর সংস্কারকাজ করা হবে। তবে এখন আপাতত এক স্কুলের ভবনে দুই স্কুলের পাঠদান চলবে। কিন্তু দুই বছর পার হলেও পরিত্যক্ত স্কুলটি মেরামতের কোন তোরজোর নেই কর্তৃপক্ষের।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ পোদ্দারের ব্যবহৃত সেল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।