কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : খুলনা জেলায় গত এক বছরে ৩৩ জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ জন। শিশুরাও এ রোগে আক্তান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে মহানগরীসহ রূপসা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, তেরখাদা, পাইকগাছা ও কয়রার বাসিন্দা রয়েছেন। অনেক জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিবার বা প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবের কাছে অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
খুলনা সিভিল সার্জনের সহযোগিতায় খুলনা কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প খুলনা শাখা এই নামে পিমে সিস্টারস পরিচালিত কুষ্ঠ কার্যক্রম চালু রয়েছে। আগামী রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত বালক-বালিকায়, আর কোন প্রতিবন্ধিতায় নয়।’
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী ২৮ জানুয়ারি বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর মোঃ আক্তার আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৭ সালে গত এক বছরের পুরুষ ও মহিলা মিলে ৩৩ জনকে নতুন করে কুষ্ঠরোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন মহিলা রয়েছেন। বাকী আক্রান্ত পুরুষের মধ্যে একজন শিশু পুত্র রয়েছে। যার বয়স ৭ বছর। তিনি বলেন, ওই সব আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে খুলনা মহানগরীতে আছে ১২ জন। এছাড়া রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, পাইকগাছা ও কয়রা এলাকায় মিলে কুষ্ঠরোগী শনাক্তের সংখ্যা ৮ জন। যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া এলাকার রোগী রয়েছেন ১৩ জন। তিনি বলেন, তাদের ওই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রজেক্ট অ্যান্ড মেডিকেল ডাইরেক্টর ডাঃ সিস্টার রোবার্তা পিনোনের তত্ত্বাবধানে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৬ সালে খুলনাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ৩৪ কুষ্ঠরোগীকে শনাক্ত করা হয়। নগরীর বড় বয়রা দাস পাড়ায় অবস্থিত তাদের নিজস্ব ভবনে কুষ্ঠরোগীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। এখানে রোগীদের মোট বেড সংখ্যা ৩৩টি। যার মধ্যে মহিলা বেড রয়েছে ১৭টি।
ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র টিবি ল্যাপ্রসি কন্ট্রোল অফিসার এস কে ফারুক এ প্রতিবেদককে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসা পেলে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। এছাড়া রোগটি প্রথম থেকে শনাক্ত হলে সেই রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাদের এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মঙ্গলবার নগরীর টুটপাড়া সরকারি আরবান ডিসপেনসারি, বৃহস্পতিবার খুলনা বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও শুক্রবার খালিশপুর লাল হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিনামূল্য চিকিৎসা কেন্দ্রে কুষ্ঠ সন্দেহ রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জোড়াকল বাজার (ব্লু সিস্টার), সেনাডাঙ্গা সবুজবাগ মসজিদ সংলগ্ন খুদা হাউস, মহেশ্বরপাশা রেলিগেটে দলিত, ৩৭/১ কেদারনাথ রোড, দক্ষিণ খালিশপুর ২নং নেভি গেটে অবস্থিত মিশনারিজ অব চ্যারিটি ও সদর হাসপাতালে ডটস্ কেন্দ্রে নিয়মিত কুষ্ঠ সন্দেহ রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে রোগীদের তাদের ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হচ্ছে।
নগরীর খুলনা কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প খুলনা শাখা এই নামে পিমে সিস্টারস পরিচালিত কুষ্ঠ হাসপাতালে গিয়ে কয়েকজন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। নগরীর বানরগাতি এলাকার বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন (ছদ্মনাম)। পেশায় একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় ফোসকা মতো দেখতে পান। বিভিন্ন সময় ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলেও কোন লাভ হয়নি। গত ২১ মাস আগে পরীক্ষার মাধ্যমে তার কুষ্ঠরোগ ধরে পড়ে। ওই হাসপাতালে তিনি ২১ মাস আগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। আরেক রোগী আমজাদ আলী (৫৫) (ছদ্মনাম)। তিনি পাবনা জেলার বাসিন্দা। ১৯৯৯ থেকে তিনি কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা করে আসছেন। পা অবশ হয়ে থাকার কারণে ওইখানে কোন কিছুতে আঘাত পেলে তিনি অনুভব করতে পারেন না। এখন ওই জায়গায় আঘাতজনিত কারণে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। গত ৫ মাস ধরে এখানে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, যখন সেরে যায়, তখন আবার বাড়ি চলে আসি। পুনরায় আবার ইনফেকশন হলে এখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। এখন তিনি সুস্থ রয়েছেন।