খুলনা : খুলনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তিন লাখ ১৬ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী। শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রুমা খাতুন নামের ওই নারী জানান, তার স্বামী রেজাউল করিম সরদারের কাছ থেকে পুলিশ এই টাকা নিয়েছে।
রুমা খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক ত ম রোকনুজ্জামান, কয়রা থানার উপপরিদর্শক প্রকাশ চন্দ্র সরকার ও ডুমুরিয়া থানার উপপরিদর্শক লিটন মল্লিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন তারা। আদালতের নির্দেশে এই অভিযোগ তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু এই প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন দিয়ে আবার তা তদন্তের আবেদন জানানো হয়। এরপর বিচারক মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনা শাখার পরিচালককে নির্দেশ দেন। কিন্তু চার মাসেও প্রতিবেদন দেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
স্বামীর ওপর নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী রেজাউল করিম সরদারের চুকনগর বাজারে বন্যা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল ইন্সপেক্টর ত ম রোকনুজ্জামান ফোর্স নিয়ে আমার স্বামীকে নগদ ৪১ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনসহ ধরে নিয়ে যায়। পরে রূপসা থানার তালপুর, কেসমত খুলনা পুলিশ ফাঁড়িতে তাকে তিন দিন আটকে রেখে বেদম নির্যাতন করে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। ওই ইন্সপেক্টর তার মোবাইল ফোন দিয়ে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে আট লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে আমার স্বামীকে ক্রসফায়ারে দেবে বলে ভয় দেখায়।
রুমা খাতুন বলেন, আমি তখন ১৪ হাজার টাকা নিয়ে ওই ফাঁড়িতে ছুটে যাই। পুরো টাকা না পেয়ে আমার সামনে আমার স্বামীকে লাথি মারে। আমার কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে তিন দিনের মধ্যে আরো চার লাখ টাকা দিতে বলে। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে আমি তার কথায় রাজি হই।
এরপর তার স্বামীকে কয়রা থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান রুমা খাতুন। সেখান থেকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ১৬ এপ্রিল কয়রা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয় তাকে। রুমা বলেন, ‘এক দিনের রিমান্ডে এনে এসআই প্রকাশ চন্দ্র আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য পাননি। এরপর ওই এসআই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আবার মামলায় শোন অ্যারেস্টের আবেদন করে। এ মামলায় এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে আমার স্বামীকে কয়রা এলাকার একটি জঙ্গলে নিয়ে হাফপ্যান্ট পরিয়ে এবং মাথায় গামছা পেঁচিয়ে অস্ত্র দিয়ে ছবি তোলে। টাকা না দিলে এই ছবি ইন্টারনেটে দিয়ে অস্ত্র মামলায় জড়ানো ও ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়।’
খুলনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইন্সপেক্টর ত ম রোকনুজ্জামান, কয়রা থানার এসআই প্রকাশ চন্দ্র সরকার ও ডুমুরিয়া থানার এসআই লিটন মল্লিককে বিভিন্ন সময়ে তিন লাখ ১৬ হাজার টাকা চাঁদা দেয়ার অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং তাদের কাছে আছে বলে জানান রুমা।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জেলা ডিবির সাবেক ওসি ত ম রোকনুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন তদন্ত করেছেন। অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে তিনি গত ১৩ মার্চ আদালতে ফাইনাল রির্পোট দাখিল করেছেন। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আবার তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। তদন্তে এখনো পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা মেলেনি।’