খুলনায় গত ৬৮ দিনে করোনা উপসর্গে মৃত্যু ৮৪ জন, এ পর্যন্ত মৃত্যু ৩৭৬

প্রকাশঃ ২০২১-০৬-০৮ - ১৭:১১

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংলগ্ন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে আইসোলেসন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ৬৮ দিনে ( এপ্রিল- ৭ জুন সকাল ৮টা) পর্যন্ত মারা গেছে ৮৪ জন। ওই ওয়ার্ড চালুর পর থেকে সোমবার ( ৭ জুন) সকাল পর্যন্ত করোনার উপসর্গে রোগী মারা গেছে ৩৭৬ জন আর করোনায় মারা গেছে ২৮৬ রোগী। সে হিসেবে খুলনা করোনার উপসর্গে রোগীর মৃত্যু সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে যারা ডায়াবেটিকস, কিডনী, হার্টের সমস্যাসহ যারা জটিল রোগে ভুগতিছেন করোনায় তারাই মারা যাচ্ছেন বেশি বলে চিকিৎসকদরে অভিমত। করোনার প্রতিদিন মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ছাড়াও চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরএমও ও করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, কাগজ-কলমে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ১০০ শয্যা বেড চালু আছে। বর্তমানে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য জায়গা থেকে আরও ৩০টি বেড সংযুক্ত করে চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা নিতে অধিকাংশই জ্বর ও শ্বাষকষ্টের রোগী বেশি। পাশাপাশি তারা অন্যান্য জটিলরোগে আগে থেকে ভুগছিলেন।
ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের সূত্র মতে, আইসোলেসন ওয়ার্ডে গত এপ্রিল মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৪১ জন। এর মধ্যে পুরষ ছিলো ৩৬২ জন ও মহিলা ছিলো ২৭৯ জন। এ সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষের মৃত্যু হয় ২৪ জন ও মহিলা ১৫ জন। একই মাসে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ছিলো ১ হাজার ২৪০ জন। মারা যায় ৫৫ জন। এর মধ্যে পুরষের মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। মে মাসে গিয়ে দেখা গেছে, আইসোলেসন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলো ৬১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫৭ জন, বাকিরা মহিলা রোগী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষের মৃত্যু হয় ২৪ জনের। আর করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলো ১ হাজার ৩৭৮ জন। এর মধ্যে পরুষ ৭৪৭ জন ও মহিলা ছিলো ৪৪৮ জন। মারা ৩৫ জন করোনা রোগী। যার মধ্যে পুরুষের মৃত্যু হয় ২৮ ও মহিলা ৭ জন। চলতি মাসে গতকাল সোমবার (৭ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত। করোনা উপসর্গে নিয়ে ভর্তি রোগী মারা যায় ৬ জন আর করোনায় রোগী মারা যায় ২০ জন। ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল চালুর পর থেকে ৭ জুন পর্যন্ত করোনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৮৬ জন এবং উপসর্গে নিয়ে মারা গেছে ৩৭৬ জন। গত দুই মাসে দেখা গেছে এপ্রিলের থেকে মে মাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগী বেশি মারা গেছে। জুন মাসে প্রথম দিকে আবার করোনা রোগী বেশি মারা যাচ্ছে। গতকাল সোমবার ( রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) গত ২৪ ঘন্টায় ডেডিকেটেড করোনা হাসাপাতালে মোট রোগী ভর্তি ছিলো ১১৯ জন। এর মধ্যে রেডজোনে ছিলো ৫৭ জন, ইয়েলোজোনে ২৫ জন, এইচডিইউতে ১৮ জন ও আইসিইউতে ছিলো ১৯ জন রোগী। এ সময়ের মধ্যে ভর্তি হয় রেডজোনে ২০ জন, ইয়েলোজোনে ২১ জন। ছাড়পত্র দেওয়া হয় রেডজোনে ২১ ও ইয়েলোজোনে ২৬ জন। এছাড়া এইচডিইতে ভর্তি করা হয় ১৮ জন এবং আইসিইউতে ভর্তি রেডজোনের ১৯ রোগী। এদিকে খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলায় করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয় ৭৯ জন। এর মধ্যে খুলনা শহরে রয়েছে ৫৬ জন। এছাড়া দাকোপে ১ জন, রূফসায় ৩ জন, তেরখাদায় ৫ জন, দিঘলিয়ায় ৪ জন, ফুলতলায় ৫ জন, ডুমুরিয়ায় ১ জন এবং পাইকগাছা উপজেলায় ৪ জন করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হন। মারা যায় ২ জন। তারা একজন নগরীতে অপরজন ডুমুরিয়ার বাসিন্দা।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছেন, মৃদু মাঝারি ও তীব্র উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন। তীব্র উপগর্স থাকা ব্যক্তির মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার তীব্র উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি।