আ: লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া (খুলনা) : খুলনা নগরীর দৌলতপুর এলাকায় মেলার নামে জুয়ার আসর এবং লটারি’র রমরমা বাণিজ্য ডুমুরিয়াতেও অব্যাহত রয়েছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই চলছে আইন বিরোধী এসব কর্মকান্ড। তবুও চোখে কালো চশমা পরে সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে আছেন তারা। মাঝে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে প্রতিদিন বিনিময় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এদিকে, মেলায় জুয়া ও লটারি ঘিরে এক শ্রেণির ‘টাউট-বাটপাড়দের’ আনাগোনা বেড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র বিজয় মেলার অনুমোদন দিয়েছে পুলিশ। যেখানে মেলার বাইরে জুয়া বা র্যাফেল ড্র’র লটারির কোন ধরণের অনুমতি নেই। কিন্তু আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সব পক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেই আয়োজকরা সবকিছুকে ড্যাম কেয়ার করে জুয়া ও র্যাফেল ড্র’র নামে লটারি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব অপকর্ম ঘিরে এক শ্রেণির অসৎ পুলিশ, সাংবাদিক, স্থানীয় মাস্তান-সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক দলের ক্যাডারসহ বিভিন্ন শ্রেণির ‘টাউট-বাটপাড়’ অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
অপরদিকে, মেলায় কোন সাংবাদিক প্রবেশ করলে আয়োজকদের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের ওপর নজরদারি করছে। এমনকি কোন ছবি উঠানো অথবা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করলে সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা করছে। ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা। যে কারণে বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। পুলিশের সামনেই এসব অপতৎপরতা চললেও তারা কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা।
এদিকে, মেলায় চলছে রমরমা জুয়ার আসর। একই সঙ্গে অনুমোদনহীনভাবে চালু করা হয়েছে ‘জোনাকী-চামেলী’ নামে র্যাফেল ড্র’র অবৈধ লটারীর টিকিট। প্রকাশ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর, শাহপুর, খর্নিয়া, চুকনগর সহ শহর ও শহরতলীতে মাইকিং করে বিক্রি হচ্ছে এ টিকিট। পুরস্কারের লোভে পড়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারী কিনছেন। গুটি কয়েকজন সামান্য পুরস্কার পেলেও প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে আয়োজকরা। মেলা ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ জুয়াড়–, মাদকসেবী এবং চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীদের এসব মেলায় আনাগোনা হচ্ছে। ফলে যে কোন সময় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা করছেন সচেতন নগরবাসী।
সূত্র জানায়, মেলার লটারী টিকিট বিক্রি হচ্ছে নগরীতে মাইকিং করে। প্রতিদিন রাতেই ঘোষণা করা হয় পুরস্কার। আর পুরস্কারের আশায় সাধারণ মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে টিকিট কিনতে। অনেকেই টিকিট কিনতে টাকা সুদে নিচ্ছে। এছাড়া জোনাকি র্যাফেল ড্র’র নামে ১০ টাকার বিনিময়ে লাখ টাকার পুরস্কার জেতার আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে দেখা যায় এ জুয়ায় অংশ নিতে। এছাড়া মেলায় প্রতিদিন রাতে ওয়ানটেন, হাউজি, চরকা, গুটিসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর বসছে।
স্থানীয়রা জানান, সার্কাস ও মেলার জন্য ১৮ ডিসেম্বর ইয়ং স্টার স্পোটিং ভয়েজ ক্লাবের সভাপতি মো. পান্নু শেখ কেএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করেন। যার প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র মেলা এবং সার্কাসের অনুমতি নিয়ে ২১ ডিসেম্বর থেকে এ মেলা শুরু হয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-কেএমপির পক্ষ থেকে ১৩টি শর্তে এই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো মেলায় কোনো ধরণের হাউজি, জুয়া বা র্যাফেল ড্র চালানো যাবে না। মাদকদ্রব্যের বিষয়ে ছিলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। কল্পতরু মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যক্রম চলছে। সন্ধ্যার পরে সেখানে বসছে হাউজি, চরকা, গুটিসহ বিভিন্ন ধরণের জুয়া। এখানে তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি ‘জোনাকি’ নামে র্যাফেল ড্র’ লটারি পরিচালনা করছে। আর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে রোব মোড়ল, সাইফুল মৃধা ও আলীসহ একটি সিন্ডিকেট।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, কল্পতরু মাঠে শুধুমাত্র মেলা এবং সার্কাস চলছে। সেখানে কোন ধরণের র্যাফেল ড্র’র লটারি বা জুয়ার আসর বসছে না। তবে, নগরীতে লটারির টিকিট বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে- জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি ভুল হচ্ছে, ৪ দিন আগেই লটারি বন্ধ হয়ে গেছে।