খুলনায় নিত্যপন্যের বাজার অস্থিতিশীল

প্রকাশঃ ২০১৭-১২-১৫ - ১২:৪০

দেশী পেয়াজের ২৫৭ শতাংশ দাম বেড়েছে এছাড়া চাল-আটা-মাছ মাংসের দামও বৃদ্ধি

কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : খুলনায় গত বছর এই সময় বাজারে দেশী পেয়াজের দাম ছিল ২৮-৩০ টাকা। এখন তা বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছে ৭২-৭৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছর তুলনায় দাম বেড়েছে ২৫৭ শতাংশ। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে চাল, আটা, মাছ, মাংসহ ৮ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। ভূক্তভোগীরা বলছেন, গত কয়েকবছর ধরে কিছুতেই বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব হচ্ছে না। বাজার দরের এই নিয়ন্ত্রনহীন উর্ধ্বগতিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
জেলা মার্কেটিং অফিসার আব্দুস সালাম তরফদার বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, ভারতে কোন এক প্রদেশে বন্যার কারণে গতবারের তুলনায় এবার দেশে আমদানী কম হওয়ায় পেয়াজের বাজার উর্দ্ধমুখি রয়েছে। এছাড়া চাহিদা তুলনায় দেশী পেয়াজে ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া এখনো আমন ধান পুরোপুরি না ওঠার কারণে দাম চালের দাম একটু বেড়েছে। এই চালের মৌসুমে দাম কমার আশাবাদী তিনি।
জেলা মার্কেটিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ডিসেম্বর মাসে খুচরা বাজারে দেশী পেয়াজের কেজিতে বিক্রি হতো ২৮ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। আমদানীকৃত পেয়াজ ছিল ২২ থেকে ২৪ টাকা। বর্তমানে কেজিতে ২৮-৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা এবং আমদানীকৃত পেয়াজ ২২ থেকে ২৪ টাকার পরিবর্তে এখন ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে গত বছর তুলনায় গড়ে ২৫৭ শতাংশ দেশী পেয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে চাল, আটা, হলুদ, আদা, মাছ, গরু, খাসি ও লবনের দামও বেড়েছে। এর মধ্যে চাল মোটা (স্থানীয়) ৩৫ থেকে ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, আমদানীকৃত ৪০ থেকে ৪২ টাকার পরিবর্তে ৪২ থেকে ৪৪টাকা, চাল সরু ৪৬-৪৮ টাকার পরিবর্তে ৫৬-৬২ টাকা, আটা প্যাকেট ৩৪-৩৫ টাকার পরিবর্তে ৩৪-৩৬ টাকা, হলুদ ১৬০-১৮০ টাকার পরিবর্তে ১৬০-২০০ টাকা, গরুর মাংস ৩৯০-৪০০ টাকার পরিবর্তে ৪৫০-৪৭০ টাকা, খাসি ৫৫০-৬০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০-৭২০ টাকায় বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে ভোজ্য তেল, ডাল, আলু, শুকনা মরিচ, বয়্রলার মুরগী, ডিম, চিনি, রসুনের দাম কমেছে। এর মধ্যে ভোজ্য তেল লিটার প্রতি ৮৪-৮৫ টাকার পরিবর্তে ৮৩-৮৪ টাকা, আলু কেজিতে ২৬-২৮ টাকার পরিবর্তে ১৮-২০ টাকা, বয়্রলার মুরগী ১২০-১২৫ টাকার পরিবর্তে ১১০-১১৫ টাকা, ডিম (ফার্ম) ৩১-৩২ টাকার পরিবর্তে ২৮-৩০ টাকা, চিনি কেজিতে ৬৪-৬৬ টাকার পরিবর্তে সাদা/লাল ৫৫-৬০ টাকায় বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।
তবে সরকারি এই হিসেব অনুযায়ী বেসরকারি মতে বর্তমানে বাজারে পেয়াজ ও চালের দাম বেশি দেখা যায়। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ১শ’-১শ’১০ টাকা, পেঁয়াজ আমদানীকৃত ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা চাল ৪৪-৪৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর প্রকার ভেদে মিনিকেট ৬৬ টাকা থেকে ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেসিসি বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি রাবেয়া ফাহিদ হাসনা হেনা বলেন, বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। কোন কারণ ছাড়াই যে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।
বৃহস্পতিবার নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, গত বছর চেয়ে পেয়াজের দাম যেভাবে বাড়তি দিকে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে তরকারিতে পেয়াজ ছাড়াই রান্নার শুরু করতে হবে। এছাড়া রয়েছে কাচামালের দামও। কাচা মরিচের দামও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চাল নভেম্বর শেষের দিক একটু কমলেও এখন আবার বাড়তির দিকে রয়েছে। তিনি বলেন, সঠিক মনিটরিং না থাকার কারণে বাজারে পরিস্থিতি এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।