ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ যায় হেরাজ মার্কেটে চক্রের খোঁজে পুলিশ : রোগ নিরাময়ের বদলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
কামরুল হোসেন মনি : খুলনা নগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ ওষুধ। বিভিন্ন কোম্পানির এসব ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে রোগীদের ওপর পরীক্ষার উদ্দেশে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়। যা ওষুধের দোকানে বা সাধারণ মানুষের কাছে সরবরাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু নিয়ম না মেনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন।
একই সাথে নগরীতে সরকারি ওষুধ ও ভেজাল ‘আনরেজিস্টার্ড’ ওষুধের বিকিকিনিও বেড়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় মানুষের হাতে ওষুধের বদলে এসব বিষ তুলে দিচ্ছে।
এদিকে খুলনায় ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ বিক্রির একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রোববার বিকেলে বিক্রি নিষিদ্ধ ৩ বস্তা ওষুধ (ফিজিশিয়ান স্যাম্পল) পাচারের সময় আশিক শেখ (২৪) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। নগরীর মজিদ সরণি এলাকায় ইজিবাইক থেকে এসব ওষুধ উদ্ধার করা হয়। আটক আশিক শেখের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায়। সে বেশ কিছুদিন খুলনার হেরাজ মার্কেটে ওষুধ বিক্রির কাজ করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিক্রি নিষিদ্ধ এসব ওষুধ ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিনেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের আরএমও (আবাসিক চিকিৎসক) ডা. মিলন কুমার ম-ল এই চক্রের সাথে জড়িত। তার কাছ থেকেই ফিজিশিয়ান স্যাম্পল কিনেছে আশিক শেখ। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ পাচারের সময় আটক আশিক শেখ জিজ্ঞাসাবাদে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসকের নাম বলেছে। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান খান জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে আটক আশিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। এছাড়া জব্দ করা ওষুধ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, আটক আশিক নিজের দোষ স্বীকার করে একজন চিকিৎসকের নিকট থেকে সে এই ওষুধ কিনেছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে অভিযানের পর আরএমও (আবাসিক চিকিৎসক) ডা. মিলন কুমার ম-লের নাম ফাঁস হওয়ার পরপরই তিনি তার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইলের ০১৭৮৮-৭৫৩৩৩৯ নম্বর বন্ধ ও ০১৭৮৮-৭৫৭৭৭৯ নম্বরে ‘বিজি টোন’ দিয়ে রাখেন। রোববার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার ওষুধের বৃহৎ বাজার হেরাজ মার্কেটের একাধিক দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে স্যাম্পল ওষুধ। এসব ওষুধের মোড়কের (প্যাকেট) গায়ে লেখা ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ’। তবে দোকানীরা এগুলো বিক্রির জন্য কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। ওষুধের মোড়ক পাল্টে বিক্রয়যোগ্য ওষুধের মোড়কে রেখে এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। হেরাজ মার্কেটের দোতলার মসজিদের পূর্ব পাশের প্রায় প্রতিটি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে ফিজিশিয়ান স্যাম্পল।
সরকারি বিভিন্ন হাসপাতলে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেশি ফিজিশিয়ান স্যাম্পল পেয়ে থাকেন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তি থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্যাম্পল পান। যা তারা ওষুধের দোকানে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতিবাচক রিপোর্ট পেলে কোম্পানিগুলো অনেক সময় এ ধরনের ওষুধ বাজারে ছাড়ে না। কিন্তু যেসব ওষুধ চিকিৎসকদের দিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলো ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই এ ধরনের ওষুধ অনেক সময় রোগ নিরাময়ের বিপরীতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই সামান্য টাকার জন্য চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের উচিত এ ধরনের ওষুধ বিক্রি না করা।
খুলনার ওষুধ প্রশাসক (ড্রাগ সুপার) মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে তাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি বন্ধে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।