বি এম রাকিব হাসান, খুলনাঃ খুলনায় একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। লাশের মিছিলে দিনের পর দিন যুক্ত হচ্ছে লাশ। একের পর এক বেড়েই চলেছে লাশের মিছিল। গত মঙ্গলবার দুপুরে অভ্যন্তরীন কোন্দলে খুন হয় নগরীর জোড়াগেটের যুবলীগ কর্মী সাইদুর রহমান হাওলাদার (২৫)। এ নিয়ে গত তিন দিনে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের দুই কর্মী খুন হওয়ার ঘটনায় বিরোধী দলের নেতারাও আতংকে রয়েছে। তাছাড়া জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাও হত্যাযজ্ঞে এখন তটস্থ। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে প্রভাবশালীরা। সম্প্রতি একের পর এক হত্যাকান্ডে বেশি প্রান হারিয়েছে রাজনৈতিক নেতারা। অথচ দু’একটি ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ মাস্টার মাইন্ড, কিলার এবং কিলিং মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছেনা। গত এক মাসে প্রায় ডজন খানেক হত্যাকান্ডের পাশাপাশি ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যেন অপ্রতিরোধ্য। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও পুলিশের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ বলছেন, এসব বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সূত্রমতে, গত ৮ জুলাই নগরীর শের এ বাংলা রোডের আমতলা এলাকার নর্থ খাল ব্যাংক রোডে হারুনুর রশীদ (৩০) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। একই দিন একই এলাকায় প্রবাসীর বাড়ীতে গ্রীল কেটে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘঠিত হয়। চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা ২০ জুন রাত ১০ টার দিকে নগরীর দৌলতপুরস্থ দেয়ানার নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা ছাত্রদল কর্মী আবদুল¬াহ আল ফয়সাল শিপলু মোল¬াকে কুপিয়ে হত্যা করে। শিপলুর চাচা কবির হোসেন কবু মোল¬া খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সম্প্রতি অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মোল্যা (৬৫)। গুলিবিদ্ধ হয় ৫ জন। গুলিবিদ্ধ আহতরা হচ্ছে লিয়াকত আলী খান (৬৭) ও তার ছেলে মোস্তফা খান (৩৮) এবং আজম তালুদকার (২৬), রুবেল (৩৫) ও বুলবুল (৩০)। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। এদিকে, এক সময়কার মৃত্যু উপত্যাকা বলে খ্যাত খুলনাঞ্চলে বেশ কয়েক বছর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ থাকার পর আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্বসস্ত্র সন্ত্রাসীরা। খুলনা জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মিঠু জোড়া হত্যাকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই গত ৩১ মে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর আড়ংঘাটা থানার বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়ের খাল থেকে পুলিশ অজ্ঞাত (৫৫) পরিচয়ের ঐ ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করলেও এ হত্যা কান্ডের কোন কিনারা করতে পারেনি এখনও। পাওয়া যায়নি গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির পরিচয়। এ ঘটনার একদিন পরই নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ১নম্বর বয়রা ক্রসরোড এলাকায় পারিবারিক কলোহের জেরে শেখ মোস্তাক আলী ওরফে হোন্ডার ফকির (৬৪) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। নিহত মোস্তাক আলী স্থানীয় মৃত অখিল ফকিরের ছেলে। তিনি ইজিবাইকের গ্যারেজের ব্যবসা করতেন। একইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় উদ্ধার হয় বস্তাবন্দী মস্তকবিহীন লাশ। রূপসা পুলিশ উপজেলার আঠারোবেকী নদীর একটি ইটভাটার ঘাট থেকে এই লাশ উদ্ধার করে। গত ২ জুন রাত ৮টার দিকে দৌলতপুর আঞ্জুমান রোডের একটি মসজিদের অদূরে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের দৌলতপুর থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ইকবাল সরোয়ারকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এখনও হত্যার মোটিভ ও খুনীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি। অপরদিকে, গেল বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ী এলাকায় দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগ নেতা জেডএ মাহমুদ ডনকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ওই গুলিতে পূজার জন্য ফুল কিনে বাসায় ফেরার পথে শিপ্রা রানী কুন্ডু নামে এক পথচারী নারী নিহত হন। ওই ঘটনার পর থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নগর ও জেলা মোটামুটি শান্ত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আবারও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা। উলে¬খ্য, নগরীর জোড়াগেট এলাকায় সাইদুর রহমান হাওলাদার (২৫) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাইদ যুবলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, নিহত সাইদ জোড়াগেটস্থ একটি চায়ের দোকানে বসে ছিল। এসময় ৩/৪ জন দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে মাদক কেনাবেচা নিয়ে শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। এছাড়া খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা এবং সন্ত্রাস নাশকতা ও মাদকবিরোধী সভার প্রতিবেদনে জানানো হয়, খুলনা মহানগরীর আটটি থানায় গত মাসে ডাকাতি ১টি, রাহাজানি ২টি, চুরি ৬টি, খুন ৫টি, অস্ত্র আইন ৪টি, দ্রুত বিচার ১টি, ধর্ষণ ৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২১টি, নারী ও শিশু পাচার ১টি, মাদকদ্রব্য ১৩৯টি এবং অন্যান্য ৩৯টিসহ মোট ২২২টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত মে মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৮৭টি। জেলার নয়টি থানায় গত গত মাসে চুরি ৩টি, খুন ৩টি, অস্ত্রআইনে ৪টি, ধর্ষণ ১টি, অপহরণ ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৪৭টি, নারী ও শিশু পাচার ১টি ও মাদকদ্রব্য ৭৭টি এবং অন্যান্য আইনে ১০০টিসহ মোট ২৩৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত মে মাসে এ সংখ্যা ছিল ২৯৫টি।