খুলনায় বেড়েছে হত্যাকাণ্ড : ৫ দিনে খুন ৪, জখম ২

প্রকাশঃ ২০২৩-০২-০৪ - ১৩:৪২

খুলনা : খুলনায় হঠাৎ করে অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকেও খুন-জখম করতে দ্বিধা করছে না। গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে নগরীর খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা এবং ডুমুরিয়া, পাইকগাছা এবং ফুলতলা উপজেলায় চার জন খুনসহ দুই জন জখম হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক নারীকে খুনের ধরণ নৃশংস। তাকে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে মারা হয়েছে। ঘাতকেরা এক ব্যবসায়ীকে ছয়টি গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এক স্কুল ছাত্রকে অপহরণের পর খুন করা হয়েছে। অবৈধ গর্ভপাতের মাধ্যমে মাতৃগর্ভের শিশুকে হত্যার পর লাশ নর্দমায় ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর একটা থেকে দেড় টার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র নিরব মন্ডল (১৩) কে একদল দুর্বৃত্ত অপহরণ করে। এরপর নিরবের পিতার মোবাইলে ফোন করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। তিনি ওই টাকা দিতে রাজি হলেও নিরবের প্রাণ রক্ষা হয়নি। ঘাতকেরা তার গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ^াস রোধে হত্যা করেছে। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ওই স্কুল সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি ভবনের কক্ষ হতে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা শেখর মণ্ডল একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেখ কনি মিয়া দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে রাতব্যাপী গুটুদিয়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পিতু মন্ডল (১৫), সোহেল (১৫), পিয়াল (১৬), হীরক (১৪) এবং দীপ (১৩) নামে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিদের পরিকল্পনা ছিল-নিরবকে অপহরণের পর অজ্ঞান করে একটি কক্ষে আটকে রাখবে, এজন্য তারা তালা-চাবিও নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা অপহরণের কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে হত্যা করে। তাদের কাছ থেকে তালা-চাবি, মুক্তিপন দাবিতে ব্যবহৃত সিমকার্ডসহ মোবাইল ফোন এবং শ^াস রোধে ব্যবহার করা দড়ি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। তারা অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রওনক জাহান ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন আনোয়ারা ক্লিনিকের সামনের ড্রেন হতে এক নবজাতক শিশু পুত্রের মরদেহ উদ্ধার হয়। লাশের ডান হাতের কুনুই থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল না, বাম হাতে পচন ধরেছিল। শরীরের ঘাড় হতে কোমর পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল। মরদেহের সুরতহালকারী সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক শেখ ইকবাল ফারুক এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মাতৃগর্ভে শিশুটির অবস্থান চার-পাঁচ মাস ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবৈধ গর্ভপাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত হয়েছে। তদন্ত চলছে।

গত ৩১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী গ্রামের একটি ধানক্ষেত হতে তাজমিরা বেগম ওরফে ববিতা (৩৮) নামে এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। মরদেহের গলায় চারটি ছুরিকাঘাতের ক্ষত এবং ঘাড়েও একই অস্ত্রের আরেকটি ক্ষত ছিল। তিনি স্থানীয় একটি ইট ভাটার শ্রমিকদের জন্য রান্নার কাজ করতেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই আলমগীর অজ্ঞাত চার-পাঁচ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পাইকগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে উপজেলার ধামরাইল গ্রাম হতে শহিদুল্লাহ মীর (৫০) এবং মফিজুল ইসলাম গাজী (৬০) নামে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে আদালতে সোপর্দের পর সাত দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রিমাণ্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য্য হয় নি। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। যদিও পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতার এবং খুনের আলামত উদ্ধারসহ তদন্তের স্বার্থে এখনই মোটিভ প্রকাশ করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮ টার দিকে ফুলতলা উপজেলার আলকা আইডিয়াল স্কুল মোড়ে মোঃ মিলন ফকির (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে আততায়ীরা গুলি করে হত্যা করে। তখন শিতল (৪৫) নামে এক স্কুল শিক্ষক জখম হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েকটি গুলির খোসা আলামত হিসেবে জব্দ করে। ঘাতকেরা এই খুন-জখমে ৭ পয়েন্ট ৬৫ পিস্তল ব্যবহার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সূত্রমতে, মরদেহের ছয়টি স্থানে বুলেট বিদ্ধ হওয়ার ক্ষত ছিল।   হত্যা এবং জখমের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রাশিদা বেগম অজ্ঞাত তিন জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবি’র ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নিজাম উদ্দীন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, খুন-জখমে জড়িত সন্দেহে র‌্যাব-৬ এর একটি টিম ডুমুরিয়ার শাহাপুর এলাকা হতে হাবিব মোল্লা (৪৯) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতার, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারসহ মোটিভ উদঘাটনের জন্য জোর তৎপরতা অব্যাহত আছে।

একই দিন নগরীর খুলনা সদর থানাধীন বাগমারা মেইন রোড এলাকায় দুপুর পৌনে তিন টার দিকে মোঃ রাকিব হাসান (২২) নামে এক যুবককে একাধিক গুলি করে জখম করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা হত্যাচেষ্টাসহ অন্যান্য অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাজধানী ঢাকা হতে হৃদয় নামে একমাত্র এজাহারভুক্ত আসামিকে  গ্রেফতার করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। এখনও রিমাণ্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য্য হয়নি। থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কুন্ডু শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানান।