ইউনিক ডেস্ক : ‘চাল কিনতে অনেক কষ্ট অয়। দিন দিন চালির দাম বারতিই আছে। চালির যা দাম, তাতি দু বেলা খাতি পারবো কিনা সামনে কতি পারি না। যিরাম দিনকাল যাচ্ছে না খাইয়ে মরতি অবে। খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী রোডের একজন বয়োবৃদ্ধ গৃহকর্মী রহিমা বেগম আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন। চালের দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে অবস্থা। মহানগরীর ময়লাপোতা বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শাহ নেওয়াজ বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধি এটা একমাত্র ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। এজন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী সরকারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে যদি চাল বাজারজাত করা যায় তাহলেই বাজারে চালের দাম জনগণের ক্রয় সীমার মধ্যে থাকবে। অ্যাডভোকেট হেলাল হোসেন নামের আরেক এক ক্রেতা বলেন, ফসল কৃষকের হাত থেকে সিন্ডিকেটের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। এর কারণে কৃষক ও ভোক্তা কেউ লাভবান হচ্ছে না। ধানের সঙ্গে চালের দামের পার্থক্য অনেক বেশি। বাজারের সরকারের নজরদারির অভাবের কারণে ভরা মৌসুমেও চালের দামে কৃষক ও ভোক্তা কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। সিমেন্ট্রি রোডের বাসিন্দা শেখ লুৎফুন্নাহার পলাশী বলেন, আমাদের আয় বাড়েনি সেখানে যদি লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বাড়তে থাকে। সেখানে আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে চলবো। একটু ভালো চালের ভাত কাঁচা ঝাল পেঁয়াজ দিয়েও খাওয়া সম্ভব কিন্তু যেভাবে চালের দামসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে তাতে করে ভালো চাল দূরে থাক মোটা চালও অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। দিনমজুর কচি শেখ বলেন, আমার পরিবারে ছয়জন সদস্য, আমি সারাদিন দিনমজুর খেটে সংসার চালাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ইনকাম করি। পানি বাদে সবকিছু কিনতে হয়। ৩ কেজি চাল কেনার পর অল্প কিছু টাকা থাকে, সেই টাকা দিয়ে বাজার হয় না। কোনোভাবে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমনের ভরা মৌসুম। হয়েছে বাম্পার ফলন। তারপরও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং বাড়ছে বলে জানান খুলনার বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা। বড় বাজারের মুরাদ ট্রেডার্সের ম্যানেজার জিয়াউল হক মিলন বলেন, প্রতিবছর এ সময় চালের দাম কমে। কিন্তু এবার চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পাইকারী বাজারে মিনিকেট এখন ৬৮-৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ৫৮-৬২ প্রতি কেজি ছিল। আঠাশ বালাম এখন ৫৪-৫৮ টাকা কেজি আগে ৫০-৫৪ টাকা ছিল। স্বর্ণা এখন ৪৫-৪৭ টাকা কেজি আগে ৩৯-৪১ টাকা ছিল। নাজিরশাইল এখন ৬৮-৭৩ টাকা কেজি। আগে ৫৯-৬২ টাকা কেজি ছিল। চিনিগুড়া আতপ এখন ৯৫,১২০,১৩০,১৪৫ টাকা কেজি যা আগে ছিল ৬৫,৭২,৮০,৯০ টাকা কেজি। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাইস মিল মালিক ও মজুদদার দায়ী বলে মনে করছেন পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, ছোট ছোট মিলগুলো এখন আর চলে না। বড় অটো রাইস মিল মালিকরা কম দামে ধান কিনে মজুদ করে নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়াতে কষ্ট বেড়েছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের। এখন ভরা মৌসুমে চালের দাম সবচেয়ে কম থাকার কথা। কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করে রাখছে। যে কারণে চালের দাম কমছে না। চালের দামের লাগাম টানতে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।