খুলনায় রোগীদের বিনামুল্য জিন এক্সপার্ট মেশিনে করোনা টেস্ট

প্রকাশঃ ২০২১-০৫-০৬ - ১৮:৩৫

 গত ৭ মাসে ৪০৫ টেস্ট, পজিটিভ-৮০

 খুলনা বিভাগের ৯ জেলায় জিন এক্সপার্ট মেশিনে করোনা টেস্ট হচ্ছে

কামরুল হোসেন মনি : জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের ক্ষেত্রে খুলনা নগরীর মীরের ডাঙ্গা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে বিনামূল্য জিন এক্সপার্ট দ্বারা করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ওই মেশিন দ্বারা ওই টেস্ট কার্যক্রম শুরু করেন। এ পর্যন্ত গত ৭ মাসে ৪০৫ জনকে করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পজিটিভ সণাক্ত হয়েছে ৮০ জন। এ টেস্টের মাধ্যমে টিবি হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিড-১৯ রোগীদের আলাদা করে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
খুলনা বিভাগের  মোট ৫৭ টি জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে বিভাগের ৯ জেলায় ওই মেশিন দ্বারা করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম হচ্ছে। যেখানে পিসিআর মেশিনে একটি পরীক্ষা করতে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে এ পদ্ধতিতে মাত্র ৪৫ মিনিটেই ফলাফল পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে  এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মীরের ডাঙ্গা বক্ষব্যাধী হাসপাতালের সুপাররেন্টটেন্ড ডা: সাজ্জাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, জরুরি ভিত্তিরে রোগীদের ক্ষেত্রে বিনামুল্য জিন এক্সপার্ট মেশিন দ্বারা করোনা টেস্টগুলো করা হচ্ছে। এছাড়া বাইরে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে গুরুত্বর রেফার রোগীদেরও টেস্ট হচ্ছে এখানে।
জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং রিজিওনাল টিভি রেফারেন্স ল্যাবরোটরীর ইনচার্জ খুলনা বিভাগীয় মাইক্রোবায়োলজিস্ট মো: মামুন হোসেন হিমেল এ প্রতিবেদককে বলেন, জিন এক্সাপার্ট পদ্ধতিতে করোনার টেস্টে তুলনামূলক ভাবে কম সময়ে ফলাফল পাওয়া যায়। মূলত টিবি রোগীদের জন্য জিন এক্সপার্ট মেশিনগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ওই সব রোগীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষাগুলো অগ্রাধিকার আগে। শুধুমাত্র হাসপাতালে মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিনামুল্য বক্ষব্যাধী হাসপাতালে জিন এক্সপার্ট এর মাধ্যমে করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত, জরুরি অপারেশন ও ক্রিটিক্যাল রোগীর ক্ষেত্রে আমরা টেস্টগুলো করছি। এছাড়া সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগী, যাদের অবস্থা খুবই গুরুতর, তাদেরকেও টেস্ট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, খুলনা বিভাগে ৫৭ টি জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় জেলায় রয়েছে পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিঘলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মীরের ডাঙ্গা বক্ষব্যাধী হাসপাতাল, বক্ষব্যাধী ক্লিনিক, টিবি ডায়াগণস্টিক ব্র্যাক সেন্টার এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এর মধ্যে শুধু মীরের ডাঙ্গা বক্ষব্যাধি হাসপাতালেই বিনামুল্য জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে করোনা টেস্টগুলো করা হচ্ছে। এছাড়া খুলনা বিভাগের ৯ জেলার মধ্যে জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে বিনামুল্য করোনা টেস্টগুলো হচ্ছে।  জেলাগুলো মধ্যে রয়েছে খুলনা বক্ষব্যাধী হাসপাতাল, বাগেরহাট বক্ষব্যাধী ক্লিনিক, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, মাগুরা বক্ষব্যাধী ক্লিনিক, নড়াইল সদর হাসপাতাল, লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চুয়াডাঙ্গা বক্ষব্যাধী ক্লিনিক ও মেহেরপুর বক্ষব্যাধী ক্লিনিক।
মীরের ডাঙ্গা বক্ষব্যাধী হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরোটরী) দিপক চন্দ্র রায় বলেন, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে বিনামুল্য করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ৫ মে পর্যন্ত মোট ৪০৫ জনকে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায় ৮০ জনের। এর মধ্যে গতকাল ৭টি টেস্টের মধ্যে ২টি পজিটিভ করোনা রোগীকে সণাক্ত করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ৭-১৫ টি করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে মাত্র ৪৫ মিনিটেই ফলাফল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে টেস্টের ক্ষেত্রে সর্বাধিকভাবে টিভি রোগীদের অগ্রাধিকার আগে। মূলত জিন এক্সপার্ট মেশিন টিভি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মুমুর্ষ রোগীদের ক্ষেত্রে এখান থেকে বিনামুল্য করোনা টেস্ট হচ্ছে। একদিনে ৩০-৪০টি বেশি টেস্ট করা সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিন এক্সাপার্ট পদ্ধতিতে তুলনামূলক ভাবে কম সময়ে ফলাফল পাওয়া যায়। তাই হাসপাতালে মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এ টেস্টের মাধ্যমে টিবি হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিড-১৯ রোগীদের আলাদা করে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জিন এক্সপার্টের কোভিড-১৯ টেস্ট কে বলা হয় সিবি এনএএটি (ঈই-ঘঅঅঞ) প্রযুক্তি (ঈধৎঃৎরফমব ইধংবফ-ঘঁপষবরপ অপরফ অসঢ়ষরভরপধঃরড়হ ঞবংঃ)। এটা এক ধরনের রিয়েল টাইম পিসিআর। তবে এটার পদ্ধতি সাধারণ এবং আরটি পিসিআর (জঞ চঈজ) থেকে অনেকটা আলাদা। এ টেস্ট পরিচালনার জন্য আরটিপিসআরের মতো তিনটি পৃথক কক্ষ প্রয়োজন হয় না। এ পদ্ধতিতে পিসিআর রিএজেন্ট কার্টিজে আগে থেকেই দেয়া থাকে, তাই নিউক্লিক এসিড এক্সট্রাকশন, অ্যামপ্লিফিকেশন, ডিটেকশন প্রক্রিয়া কার্টিজের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়। এ পদ্ধতিতে নমুনা প্রক্রিয়াকরণ করতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় লাগে এবং ৪৫ মিনিটের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। পজিটিভ রোগীর ফলাফল ৩০ মিনিটেও পাওয়া সম্ভব। এ নতুন পদ্ধতিতে মাত্র এক ধাপে (ভিটিএম টিউব থেকে নমুনা সরাসরি কার্টিজে দেয়া হয়) টেস্ট সম্পন্ন করা হয় এবং ফলাফল কম্পিউটার থেকে সরাসরি পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিটি মার্কিন এফডিএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। এটাকে পয়েন্ট অফ কেয়ার (পিওসি) টেস্ট বলে যা বায়োসেফটি ক্যাবিনেট ছাড়া করা যেতে পারে। এ টেস্ট ক্লিনিক্যাল মূল্যায়নে করোনা পজিটিভ ও  নেগেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ সাফল্য পেয়েছে।