খুলনায় শিশু তানিশা হত্যায় সৎ মায়ের মৃত্যুদন্ড

প্রকাশঃ ২০২১-১১-১৫ - ১৪:০৯

ইউনিক প্রতিবেদক :
খুলনার তেরখাদা উপজেলার আড়কান্দি গ্রামের আলোচিত শিশু তানিশা হত্যা মামলায় সৎ মা তিথী আক্তার মুক্তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাড. মোঃ এনামুল হক এবং এ মামলায় তাকে সহায়তা করেছেন এপিপি সেখ ইলিয়াস হোসেন ও মোসাঃ শাম্মি আক্তার। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের সূত্র জানায়, তানিশা আড়কান্দি গ্রামের ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য মো: খাজা শেখের কন্যা। আগের স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর খাজা ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ফকিরহাট উপজেলার আট্রাকি গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত হোসেন আলী শেখের মেয়ে মুক্তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রী মুক্তা মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ইমো ও ম্যাসেঞ্জারে কথা বলতো। এ নিয়ে খাজা স্ত্রীকে সন্দেহ করে আসছিল।
২০২০ সালের ২ এপ্রিল ইমোতে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে স্বামী খাজা শেখ তাকে তালাকের হুমকিও দেয়। পরে ইমোতে খাজা তার প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া মেয়েকে আদর সোহাগ করে ডাকতে থাকে। এ নিয়ে মুক্তার মধ্যে জ্বালা যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে সৎ মেয়ে তানিশাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে মুক্তা।
এদিকে তানিশা রাতে মুক্তার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতো। ঘটনার দিন (৬ এপ্রিল) রাতে তাদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে খাজা শেখ এলাকায় বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। স্বামীকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুক্তা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
জবানবন্দিতে তিনি আরও জানায়, ঘটনার দিন রাতে একটি দা নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে মুক্তা। সে সময় তানিশা খাটে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমন্ত তানিশাকে দা দিয়ে গলায় ও মাথায় কুপিয়ে জখম করে। দাপাদাপির শব্দ শুনতে পেয়ে দাদী ও চাচা এগিয়ে এলে দরজা খুলে ঘরের বাইরে চলে আসে মুক্তা। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুক্তাকে আটক করে। জব্দ করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা।
এদিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তানিশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে নিহতের দাদা বাদি হয়ে তিথী আক্তার মুক্তাকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ৩১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শফিকুল ইসলাম তিথী আক্তার মুক্তাকে আসামি করে এ হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। আদালতে মোট ২২ জন স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।