খুলনা : খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে হত্যার পর জড়িত সন্দেহে পুলিশ শনিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা রাজিনের সহপাঠী ও বন্ধু। এ ঘটনায় রাজিনের বাবা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে নগরীর খালিশপুর থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে যাদেরকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও সেনা সদস্য আলমগীর হোসেনের ছেলে আসিফ প্রান্ত আলিফ (১৬), নগরীর বড় বয়রা মেইন রোডস্থ আফজালের মোড় এলাকার জাকির হোসেন খানের ছেলে মো. জিসান খান ওরফে জিসান পারভেজ (১৬), বড় বয়রা মেইন রোড এলাকার মো. আহাদ হোসেনের ছেলে তারিন হাসান ওরফে রিজভী (১৩), রায়েরমহল মুন্সিবাড়ির চিনির ভাড়াটিয়া সাইদ ইসলামের ছেলে মো. সানি ইসলাম ওরফে আপন (১৩), বড় বয়রা সবুরের মোড় এলাকার লিয়াকত হোসেনের ছেলে রয়েল (১৪) এবং মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও মোংলা থানার এসআই ওহিদুর রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান ওরফে সাগর (১৩)। এদের মধ্যে সাগর ছাড়া অন্যদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে মনি পলাতক রয়েছে।
রবিবার বেলা ১১টায় নিহত রাজিনের বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকার্ত মানুষের ভিড়। পাড়া-প্রতিবেশীদের সকলেই তার মৃত্যুতে শোকাহত। প্রতিবেশী মোকলেছুর রহমান বলেন, রাজিন ভদ্র ছেলে ছিল। তার এই মৃত্যু তারা মানতে পারছেন না। তারা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। রাজিনের মা শোকে বিলাপ করতে করতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান, কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আব্দুল্লাহ আরেফ হাসপাতাল ও নিহতের বাড়িতে যান।
এ ব্যাপারে খালিশপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
দুপুরে পোস্টমর্টেম শেষে রাজিনের লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বয়রা মধ্যপাড়া জামে মসজিদে বাদ জোহর এবং বিকেল ৩টায় কলেজ ক্যাম্পাসে তার জানাজা হয়। পরে বাদ আছর পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম আল বেরুনী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে নিহত রাজিনের সঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সম্পর্ক ছিলো। তারা একসাথে কোচিংয়ে পড়তো। নবম শ্রেণীর ছাত্র ফাহিম ওই মেয়েকে পছন্দ করতো। সে রাজিনকে ওই মেয়ের সঙ্গে কোচিংয়ে পড়তে নিষেধ করে। নিষেধ না শোনায় শনিবার রাতে ফাহিম ও তার বন্ধুরা মিলে খুলনা পাবলিক কলেজ ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রাজিনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সহপাঠীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ হত্যার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
উল্লেখ্য, খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে বিকেল ৫টার দিকে বন্ধু ও সহপাঠী শাহিনুর রহমান সাগর ফোন দিয়ে রাজিনকে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাত সোয়া ৯টায় তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত রাজিন খুলনা মহানগরীর বড় বয়রার পালপাড়া সড়কের শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও খুলনা মেট্রো পুলিশ লাইনস স্কুলের শিক্ষিকা রেহানা খাতুনের ছেলে।