খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নিবন্ধন ছাড়াই রমরমা আউটসোর্সিং ব্যবসা

প্রকাশঃ ২০২০-০৮-১৩ - ১৮:০৯

২১১ জন শ্রমিকের বেতন থেকে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ আদায়

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাকবির এন্টারপ্রাইজ নিবন্ধন ছাড়াই ২১১ জন শ্রমিককে অবৈধভাবে কর্মরত রেখেছেন। বিদ্যামান শ্রম আইনে নিবন্ধন নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না এ ব্যবসায় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। গত জুন মাসে তার নিবন্ধন শেষ হলে তিনি পুনঃরায় ওয়ার্কপার্মিট এ রিনিউ করতে পারেননি বরং ২১১ জন শ্রমিকের বকেয়া ১৩ মাসের বেতন দেওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে উৎকোচের নামে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা আদায় করেছেন, যা প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এসব তথ্যর বিষয়ে এ প্রতিবেদকের তথ্য প্রমান সংগ্রহ রয়েছে। ঠিকাদার ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকের বেতন থেকে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয়ার বিষয় স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন তাকবির এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানে আউটসোসিং এর ওয়ার্ক পারমিট সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কাজের নিবন্ধন শেষ হওয়ার আগেই ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পুনঃরায় রিনিউ করতে ব্যর্থ হলে নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে (আউটসোর্সিং) চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠান আমার কাছে বাড়তি ১ মাস সময়  চেয়েছিল। সময় দেওয়া হলেও তারা উক্ত সময়ের মধ্যে রিনিউ করতে পারেনি। এ মাসেই পুনঃরায় ২১১ জন চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহবান করা হবে। চুক্তিভিত্তিক ২১১ জন শ্রমিকের বেতন থেকে তাকবির এন্টারপ্রাইজ মাথা পিছু ২০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এ ব্যাপারে আউটসোর্সিং এর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাকবির এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন বুধবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককের কাছে ২১১ জন শ্রমিকের ১৩ মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার সময় মাথা পিছু ২০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বিভিন্ন খরচ বাবদ ৩০-৪০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ২০ হাজার করে টাকা গ্রহণ করেছি বলে জানান। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ১২ মে টেন্ডারের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান ২১১ জনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য ওয়ার্কপারমিট পান। তার প্রক্রিয়া শুরু করতে ২৬ মে ২১১ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। মাত্র অল্প কয়েকদিন কাজের মেয়াদ ছিলো। পুনঃরায় রিনিউর জন্য আবেদন করলে নতুন করে ২০১৯ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর ওয়ার্কপারমিট পেয়েছি। নিবন্ধন ছাড়াই আউটসোর্সিং পরিচালনা করা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেআইনী বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সিভিল সার্জনকে টেন্ডার আহবানের জন্য আমি বলে দিয়েছি।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিং নিয়োজিত এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাকবির এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন আমাদের ২১১ জন নিয়োজিত সকল শ্রমিকের কাছ থেকে এককালীন ১৩ মাসের বেতন দেওয়ার সময় ২০ হাজার টাকা করে কর্তন করে রেখে দেয়। সে আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জনকৃত অর্থ ২০ হাজার টাকা অবৈধভাবে কেটে নিয়েছে।
জানা গেছে, গত দুই দশকে দেশে আউটসোর্সিং ব্যবসার ব্যাপকতা বেড়েছে। শুরুতে আউটসোর্সিং ব্যবস্থায় সেবা প্রদানকারী কর্মীরা দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের আওতায় না থাকলেও রানা প্লাজায় ধ্বসের ঘটনায় আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহ করা আহত ও নিহত কর্মীদের দায়িত্ব নেয়ার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ পাওয়া যায়নি।
এ প্রেক্ষাপটে, ২০১৩ সালে সংশোধিত শ্রম আইনে তাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর ২০১৫ সালে শ্রমবিধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়। সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৩ তে বলা হয়, অন্য কোন আইনে যাহাই থাকুক না কেন, কোন ঠিকাদার বা আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, যাহা বিভিন্ন সংস্থায় চুক্তিতে বিভিন্ন পদে কর্মী সরবরাহ করে থাকে সরকারের নিকট হইতে রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত কার্যক্রম পরিচালনা করিতে পারিবে না। আইনে আরো বলা হয়, এই আইনের অধীন এতদুদ্দেশ্যে বিধি প্রণীত হইবার ৬ মাসের মধ্যে দেশে বিদ্যমান সকল ঠিকাদার সংস্থা সরকারের নিকট হইতে  রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করিতে বাধ্য থাকিবে। ঠিকাদার সংস্থা দ্বারা সরবরাহকৃত শ্রমিকগণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের শ্রমিক হিসেবে গণ্য হইবেন এবং শ্রম আইনের আওতাভুক্ত থাকিবেন। আউটসোর্সিং ব্যবস্থায় খুলনার শিল্পপ্রতিষ্ঠান, হোটেল, ব্যাংক বীমার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মী, ক্লিনার ও গাড়িচালক থেকে শুরু করে এমনকি ভাসমান শ্রমিকদেরও আউটসোসিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কর্মী সরবরাহ করে এ ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।