খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম বেড়েছে

প্রকাশঃ ২০২০-০৮-২৫ - ২০:০৫

রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি  চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে
কামরুল হোসেন মনি, খুলনাঃ দিনভর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল। সকাল থেকেই তারা হাসপাতালের বহি: বিভাগ ও চিকিৎসকদের চেম্বারে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভরা শুরু করেন টানাটানি। একজনের ছবি তোলা শেষ হলে আরেক রোগীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছবি তোলেন। গতকাল সোমবার (২৪ আগষ্ট) খুলনা জেনারেল হাসপাতালে এই চিত্র। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানিতে দিনকে দিন ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবকে কেন্দ্রে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার আসংখ্যা করছেন অভিজ্ঞ মহল।
এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহম্মেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, সপ্তাহে দুই দিন দুপুর ১২টার পর ওষুধ প্রতিনিধিরা ভিজিট করার জন্য নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় যদি রোগীরা ডাক্তারেরর চেম্বারে থাকে ওষুধ প্রতিনিধিরা ডাক্তারের কক্ষে ঢুকতে পারবেন না। রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে, টানাহেঁচড়া করে ওষুধ প্রতিনিধিদের দেখারও এখতিয়ার নেই। আমার নিদের্শনা যদি ওষুধ কোম্পানীরা না মানে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা দলে দলে ভাগ হয়ে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের বহি: বিভাগের সামনে ও ভেতরে ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া করছেন। ছবি তোলেন, দেখেন কোন কোম্পানীর ওষুধ লেখা হয়েছে। ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি অবস্থান করছিলেন। জরুরি বিভাগের কর্মরত এক স্টাফ তাদেরকে চলে যেতে বললেও তারা কোন কর্ণপাত করেননি। অনেক দাপটের সাথে চালিয়ে যান রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি।
নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মহিদুল হক শান্ত এ প্রতিবেদককে বলেন, মাজায় হাড়ের সমস্যাজনিত কারণে বহি: বিভাগ থেকে টিকিট কেটে ৭নং অর্থোপেডিক্স ডাক্তারকে দেখানোর জন্য রোগীদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় এক ওষুধ প্রতিনিধি এসে ধাক্কা মেরে ডাক্তার চেম্বারের সামনে দাঁড়ান। তখন খুব রাগ হচ্ছিলো। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করি। তিনি বলেন, ওষুধ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন। যার কারণে ডাক্তাররা দেখেও না দেখার ভান করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অফিস সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও সকাল ৯টার আগে আগেই দলে দলে ভাগ হয়ে সেখানে অবস্থান নেন বিভিন্ন কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা। ডাক্তারদের কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় থাকার সুযোগ নেন তারা। কোনো কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন। ডাক্তার কোন কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন তা জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার ডাক্তারের লেখা ওষধের বদলে নিজের কোম্পানির ওষুধ কেনারও পরামর্শ দেন। কেউ সুযোগ বুঝেই ঢুকে পড়েন ডাক্তারের কক্ষে। রোগী দেখার সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা নিজ কোম্পানির ওষুধ লেখানোর চেষ্টা করেন। সকাল থেকে জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগ কক্ষের সামনে প্রতিদিন অবস্থান করেন বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এ সময় হাসপাতালে রোগীর প্রচন্ড ভিড় থাকে। একেকজন রোগী ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হন অমনি তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা। কেউ তাদের ছবি ওঠানোর বিষয়টি ফলো করলে তারা দ্রুত সটকে পড়েন। অবস্থান নেন হাসপাতালের মূল ভবনের প্রবেশ গেটের সামনে। আবার কৌশলে কয়েকটি ব্যবস্থাপত্র দেখার পর হঠাৎই ডাক্তারের কক্ষে ঢুকে পড়েন। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে নানাভাবে ডাক্তারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতি টের পেলে দ্রুত সটকে পড়েন। তাদের এমন দৌরাত্ম হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। এ অবস্থায় নার্স, ব্রাদাররা যেন অনেকটাই অসহায়। রোগীসহ তাদের স্বজনরাও চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।