খুলনা জেনারেল হাসপাতাল : নির্দিষ্ট সময়ে আসেন না চিকিৎসকরা

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-১২ - ১৬:২৮

ফ্রি সার্ভিসদের সাথে দালালদের সখ্য

কামরুল হোসেন মনি : করোনায় এমন পরিস্থিতিতে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে বহি: বিভাগের টিকিট কাউন্টার খোলা হয় না, আসেন না চিকিৎসকরাও। হাসপাতালে কতিপয় ফ্রি সার্ভিসদের সাথে বিভিন্ন ডায়াগণস্টিক সেন্টারের দালালদের সাথে রয়েছে সখ্যতা। সময় মতো চিকিৎসকদের না পেয়ে করোনা এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে শিকার হচ্ছেন। দুই-একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাদে এ হাসপাতালে পরীক্ষা চালু থাকলেও ফ্রি সার্ভিস বলছে টেস্টা হয় না।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহি: বিভাগের রোগী দেখার নিয়ম রয়েছে। টিকিট কাউন্টার ৮টার মধ্যে খোলার নিয়ম রয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর শতকরা ২৫ ভাগ রোগীর দেখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রোগীর দেখা ও টিকিট কাউন্টার খোলা নির্দিষ্ট সময়ে চালু হবে। তিনি  বলেন, সকল ডাক্তারদেরকে সময়মতো অফিসে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এ প্রতিবেদক হাসপাতালে অবস্থানকালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের ভোগান্তী ও ফ্রি  সার্ভিসদের সাথে দালালদের সখ্যতা চোখে পড়ে।
সকাল ৮টায় রূপনা উপজেলা থেকে এক গর্ভবতী মহিলা বহি: বিভাগে গাইনী ডাক্তারকে দেখানো জন্য টিকিট কাউন্টারে উপস্থিত হন। টিকিট কাউন্টার বন্ধ। বহি: বিভাগে গাইনী বিভাগের এক নার্স তাকে বলতে দেখা যায়, ৯টার দিকে কাউন্টার খোলা হবে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে ওই নার্সকে ডাক্তারের আসার সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৯টার পর ডাক্তাররা আসবেন, টিকিট কাউন্টারও ওই সময় খোলা হবে। এই নিয়মটা চালু কবে থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে এই নিয়ম। এছাড়া প্রতি মুহুর্তে নিয়ম পরিবতর্ন হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ওই বিভাগে ৯ টা বেজে ১৫ মিনিট পর দুই ডাক্তার চেম্বারে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
বহি: বিভাগের সামনে অবস্থান করছেন ফ্রি সার্ভিস  সেলিম। দীর্ঘ বছর ধরে এই হাসপাতালে ফ্রি সার্ভিস হিসেবে কাজ করছেন। ওখান থেকে কোনর রোগী বের হওয়ার সাথে এক বিভিন্ন ডায়াগণস্টি সেন্টারের দালালদের ফোন করে রোগী ধরিয়ে দিচ্ছেন। এর কিছুক্ষুন পর ডায়াগণস্টিক সেন্টারের এক দালাল জনৈক সাব্বির এসে উপস্থিত হন। ওই রোগীর টেস্টের সিলিপ নিয়ে রোগীকে নিয়ে বের আসতে দেখা যায়। ওই গাইনী বিভাগে আরোও এক ফ্রি সার্ভিস জনৈক রেখা। সে ফোনে ফোনে দালালদের ডেকে রোগীদের ধরিয়ে দেন। চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী এ প্রতিবেদককে জানান, চিকিৎসক তাকে ব্লাড টেস্টসহ কয়েকটি টেস্ট করতে দিছেন। করোনার কারণে এখানে টেস্ট বন্ধ বলে হাসপাতালে বাইরে থাকা এক স্টাফ তাকে জানান। সেই বাইরে এক ডায়াগণস্টিক সেন্টার দালালকে ফোন করে তার দেখিয়ে দেন। আরেক ডায়াগণস্টিক সেন্টারের দালাল পরিতোষ হাসপাতালে ভেতরে অবস্থান করছেন।
অনেক সময় গাইনী বিভাগের কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও ফোন করে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তারা সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশনও পেয়ে থাকেন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ করে রোগীদের পাঠানোর নজির রয়েছে।
জানা গেছে, এক্সরে বিভাগের কর্মরত অফিস সহায়ক লুৎফরের সাথেও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের সখ্য রয়েছে। হাসপাতাল ঘিরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের দালালদের আনোগোনা লেগেই থাকে।
হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোনো কর্মচারী হাসপাতালে না এসেও যদি হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওষুধ প্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময় ব্যতীত হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আক্ষেপ করে অপর রোগী ফিরোজা বেগম বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের ডাক্তারের কাছে না আসাই ভালো। ওষুধ খাওয়ার আগেই প্যাথলজির পরীক্ষার টাকা জোগাড় করতে হয়। ডাক্তারের কাছে আসলেই আগে পরীক্ষা, তাও আবার তারাই ঠিক করে দেন। কোন পরীক্ষা দরকার কোনটা নেই আমরা কিভাবে বুঝবো।