খুলনা : অধুনালুপ্ত খুলনা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, ভাষা সৈনিক গাজী মো. শহীদুল্লাহ (৮১) আর নেই। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর খানজাহান আলী থানার গিলাতলাস্থ নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি … রাজেউন)। তিনি ১৯৭৩ সালে খুলনা পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। গাজী শহীদুল্লাহ চিরকুমার ছিলেন।
এদিকে বাদ জোহর নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে ভাষা সৈনিক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম নূরুল ইসলাম, খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জমান মনি, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. এনায়েত আলী, সাবেক মেয়র শেখ সিরাজুল ইসলাম ও কাজী আমিনুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ও নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান, খুলনা প্রেসক্লাব সভাপতি ফারুক আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী আব্দুল বারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাদ আসর গিলাতলায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরহুমের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে খুলনা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ভাষাসৈনিক গাজী শহীদুল্লাহ স্মরণে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখ শনিবার নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে। শোকসভা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে নাগরিক নেতৃবৃন্দের সাথে এক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
ভাষা সৈনিক গাজী শহীদুল্লাহ ১৯৩৭ সালের ১ ফেব্র“য়ারি খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানার গিলেতলা গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম গাজী শামসুর রহমান। গাজী শহীদুল্লাহ দৌলতপুর বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বিএল কলেজে খুলনা জেলার প্রথম সুদৃশ্য ও বৃহৎ শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
গাজী শহীদুল্লাহ ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিল এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে (খুলনার ডুমুরিয়া-ফুলতলা-তালা আসনে) ভাসানী ন্যাপের হয়ে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে খুলনা পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ২০০১ সালের শেষ ভাগে তিনি খুলনা জেলা বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি খুলনা জেলা ভাষা সৈনিক সংসদের সভাপতি ও একুশের চেতনা পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলবৃন্দ, নগর বিএনপি, জেলা বিএনপি, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।