খুলনা অফিসঃ গত পক্ষকালব্যাপী থেমে থেমে মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিতে আবারও চরম ঝুঁকিপূর্ন হয়ে উঠছে উপেক্ষিত গোটা উপকুলীয় অঞ্চল। দুর্যোগ আসলেই কেবল নড়েচড়ে ওঠে সব সরকার। এ সরকারের শাসনামলের দ্বিতীয় মেয়াদেও স্থায়ী কোন প্রকল্প গ্রহন বা বাস্তবায়িত হলো না। গত ১০ দিনে খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরা তথা গোটা উপকুলীয় অঞ্চলের অনন্ত দুই শতাধিক স্পটে নীচু বাধ উপচে জোয়ারের প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। বাঁধ ভেঙ্গেছে বেশ কয়েকটি স্থানে। চরম ঝুকিপূর্ন অবস্থায় প্রায় ৭-৮টি উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার প্রহর গুনছে। সূত্রমতে, বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে উপকূলের ৪ হাজার কিলোমিটার বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটারে পৌছাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তরে নেতিবাচক প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে উপকূলবেষ্টিত বেড়িবাধসহ সারাদেশের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাধসমূহের উপর ভয়াবহ রকমের এই ঝুকি ক্রমেই ত্বরান্বিত হচ্ছে। ভেড়িবাধের ঝুকি ছাড়াও খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূল এলাকার ১০ উপজেলা ২ থেকে ৩ ফুট লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ারও আশংকা করা হচ্ছে। এমনি একটি বিপদাপন্ন অবস্থায় উপকূলের চিরচেনা হাজার হাজার কৃষি, পরিবেশ, অবকাঠামো এবং জীবন-জীবিকাসহ ৩ কোটি মানুষের টিকে থাকার অবলম্বনই এখন ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্ট এবং ভালনারেবেলিটি শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে এই তথ্য জানা গেছে। উল্লেখিত গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে উপকূলজুড়ে যে বাধ রয়েছে তা এখনই প্রচন্ড ঝুকির মধ্যে রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই ঝুঁকি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪,২৭১ কিলোমিটার উপকূলীয় বাধ ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই ঝুকি আরও ধ্বংসাতœক হয়ে ১৩,৯৯৫ কিলোমিটারে পৌছাবে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশে স্থায়ী বাধসহ ব্যাপকভবে কনক্রিটের নানা অবকঠামো তৈরী শুরু হয় ৫০ এর দশকে। প্রকৌশল দৃষ্টিভঙ্গিতে বন্যা নিয়ন্তণ, লোনা পানির আগ্রাসন বন্ধসহ পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটি এ সময়ের জন্য অপরিহার্য ব্যবস্থা হিসেবে গুরুত্ব পায় এবং স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্র্জন করে। পরিবেশবিরোধী এই অপউন্নয়নকে পরবর্তীতে নদীমাতৃক দেশের ঐতিহ্য হত্যার জন্য দায়ী করা হলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিপদজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশংকায় গবেষণার উপত্ত সূত্র বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট ভবিষ্যত দুর্যোগ এই বাধ তাসের ঘরের মতই গুড়িয়ে যেতে পারে। আর এই আশংকা যদি সত্যে পরিণত হয় তাহলে সমুদ্রঘনিষ্ঠ ৭২০ কিলোমিটারব্যাপী কোস্ট লাইন বরাবর জালের মত বি¯তৃত উপকূলীয় বাধসহ দেশের বন্যাপ্রবণ এলাকার বৃহৎ নদী অববাহিকার বাধসমহের সিংহভাগের তছনছ হয়ে যাবে। শুধু উপকূলীয় বাধই নয় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, ঘূণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা এবং সমুদ্রপ্রষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগে অবকাঠামোগত যে ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে তা শুনলে গা শিউরে ওঠার মত অবস্থা হচ্ছে। আশংকা করে আরও বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখিত দুর্যোগে জাতীয় মহাসড়ক ধ্বংস হতে পারে ১ হাজার ১১ কিলোমিটার যা ২০৫০ সালে গিয়ে দাড়াবে ৩ হাজার ৩শ’ ১৫ কিলোমিটার। এছাড়াও দেশের স্বাস্থ্য এবং হাসপাতালের মত অতিজরুরী অবকাঠামো ধ্বংস হতে পারে ২০৩০ সালে ১,৬৮২ টি যা ২০৫০ সালে গিয়ে দাড়াতে পারে ৫২১২ টির মত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিআরটিসি প্রণীত গবেষণাপত্রের সূত্রে এই তথ্যসমূহ পরিবেশন করে বলে সূত্রে প্রকাশ। ফলে আশংকা করা হচ্ছে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে খুলনার কয়রা, দাকোপ, বাগেরাহাটের মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোড়েলড়ঞ্জ এবং সাতক্ষীরায় শ্যামনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্রায় ৩ ফুট লোনা জলের নিচে আরও অন্তত সমসংখ্যক উপজেলাও কমপক্ষে প্রায় ১ থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, এমনি অবস্থায় এ সকল উপজেলার দরিদ্র মানুষের আবসন, কৃষি এবং অবকাঠামোর নিশ্চয়তা এখন চরমভাবে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উপকূলের এই সকল এলাকা বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী থাকবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।