খুলনা বিআরটিএ আনসার সদস্য দালালের ভুমিকায়!

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-১১ - ১১:০৯

কামরুল হোসেন মনি : ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে চালকদের বিআরটিএ-তে লিখিত, মৌখিক ও গাড়ি চালানোর পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিটি পরীক্ষায় আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। টাকা দিলেই এসব পরীক্ষায় পাশ করা যায়। শুধু এসে স্বাক্ষরটা করলেই হবে। এমনই বক্তব্য খুলনা বিআরটিএ আনসার সদস্য জাহিদের। কতিপয় সক্রিয় দালালরা অভিযানের কারণে ভেতরে প্রবেশ না করে দায়িত্বরত কতিপয় আনসার সদস্যদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স করিয়ে নিচ্ছেন।
গত কয়েকদিনে নগরীর শিরোমনির বাদামতলাস্থ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ’র খুলনা সার্কেল অফিসে সরেজমিনে গেলে এ সব চিত্র উঠে আসে। গত ৪ এপ্রিল মনির শেখ নামে এক ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য বিআরটিএ-তে যান। গেটের সামনেই রয়েছে আনসার সদস্য জাহিদ। তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য পরামর্শ চাইলে ওই আনসার সদস্য বলেন, আমাদের মাধ্যমে করাতে গেলে ৭ হাজার টাকায় হয়ে যাবে। কোন পরীক্ষাই দেয়া লাগবে না। পরীক্ষার সময় শুধু উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষরটা করলেই সময় মতো আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি পেয়ে যাবেন। এর পাশেই ছিলো অপর এক আনসার সদস্য সবুর। তিনি তারও সাথে একই সুরে সুর মিলান। এ সব কথার মাঝখানে এক ব্যক্তি কিছু টাকা জাহিদের হাতে গুজে দিলেন।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) তিন পর্বে পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলো হলো লিখিত পরীক্ষা, মৌখিত পরীক্ষা এবং প্রাকটিক্যাল বা গাড়ি চালানোর পরীক্ষা। চালকরা জানান, বিআরটিএ-এর দালালদের টাকা দিলে এই পরীক্ষাগুলোতে অনায়াসে পাশ করা যায়। হালকা যানবাহনের জন্য ৭ হাজার টাকা এবং ভারী যানবাহনের জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিলেই মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স। সরকারি এ অফিসের সব ধরনের কর্মকান্ড নানা কৌশলে দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। সেখানে গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা হস্তান্তর, ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ যে কোনো কাগজপত্র সম্পাদনে ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে সব হয়ে যায়। এ কমিশনের মধ্যে কতিপয় কর্মকর্তাদের ঘুষের টাকাও লুকিয়ে থাকে। গ্রাহকের কাছ থেকে কাগজপত্রাদি বুঝে নিয়ে দালালরা বিআরটিএ কার্যালয় এর আশে পাশে গলির দোকানসমুহে তা জমা রাখেন। কিছুক্ষন পর পরই আনসার সদস্যরা দালালদের জমা রাখা কাগজপত্র সংগ্রহ করে তা বিআরটিএ কার্যালয়ের নির্দিষ্ট শাখা টেবিলে পৌছে দিচ্ছেন।
এই সরকারি অফিসে গত ৩০ জানুয়ারি দুর্ণীতি দমন কমিশন দুদক। দুর্ণীতি দমন কমিশন সমন্বডু জেলা কার্যালয় সহকারি পরিচালক শাওন মিয়ার নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। যানবাহনের রেজিস্টেশন দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহনসহ দালাল চক্রের দৌরাত্মের অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান হয়। বিশেষ করে নতুন যানবাহনে রেজিষ্ট্রেশেনের ক্ষেত্রে শো-রুমের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এছাড়া বিআরটিএ’র প্রতিটি ধাপে ধাপে দালালদের অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রদান, অন্যান্য কাগজপত্র প্রদান, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয় এমন অভিযোগ ছিলো দুদক টিমের কাছে। অভিযানে সময় দালাল পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, বিআরটিএ খুলনা সার্কেলে সরকারি খাতে শুধু মোটরসাইকেলের লাইসেন্স বাবদ লার্নার ফি ৩৪৫ ও নতুন লাইসেন্স ফি ১,৪৩৮ টাকা এবং মোটরসাইকেলসহ মাঝারি যানবাহনের জন্য লার্নার ফি ৫১৮ ও নতুন লাইসেন্স ২,৩০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। অথচ দালালদের মাধ্যমে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় নিয়মনীতি ছাড়াই সর্বোচ্চ দেড় মাসের মধ্যে সনদ মেলে চালকের। পরীক্ষার হাজির ও পাসের দরকার হয় না।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ খুলনা সার্কেলের পরিচালক আবুল বাশার এ প্রতিবেদককে বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছেন। গেটের সামনে আনসারদের পাহাড় রাখা হয়েছে যাতে কোন দালালরা প্রবেশ করতে না পারে। এরপর যদি এসব অনিয়মে কোন আনসার সদস্যরা অনিয়ম করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপ-পরিচালক মোঃ জিয়াউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, যে সব আনসার সদস্যরা ২-৩ বছর এখানে অবস্থান করছিলেন তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা দালালমুক্ত করার জন্য সব সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে সহযোগিতা করছি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ওই সরকারি অফিসের আনসার কমান্ডার (ইনচার্জ) মোঃ সোবহান এ প্রতিবেদককে বলেন, কোন অনসার সদস্য বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারিতে  মহানগরের খানজাহান আলী থানা এলাকার বিআরটিএ অফিস থেকে দালাল চক্রের ৯ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করেন। মহানগর ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটকরা হলেন মোঃ রায়হান হোসেন, মোঃ মঞ্জুর আহমেদ, মোঃ শাকির হোসেন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ রহমত, বেগ ইকবাল, মোঃ আশিকুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম ও মোঃ সিরাজ খান।