খুলনা হবে তিলোত্তমা বদলে যাবে দৃশ্যপট

প্রকাশঃ ২০২১-০৫-২৮ - ২২:৩৭

# কেসিসি’র ২৮৬৭ কোটি টাকার ১৪টি নতুন প্রকল্প
# চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রাক্কলন ব্যয় ১৭৯৩ কোটি টাকা
# রাস্তা, ড্রেন, ব্রীজ, পাম্প হাউজ নির্মাণ,
# পাবলিক টয়লেট ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ,
# ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ,
# রাস্তার বাতির জন্য পোলসহ সোলার ও নন-সোলার এলইডি লাইট
প্রথম পর্ব
মোঃ শহীদুল হাসান :
উন্নয়নে বদলে যাবে শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার দৃশ্যপট। আর এ বদলে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। খুলনা নগরীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২,৮৬৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গৃহীত ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯৩ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। চারটি কাজের মধ্যে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৬৬.৯০ কিঃ মিঃ আরসিসি রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন, ৪৮.৪০ কিঃ মিঃ সিসি রাস্তা নির্মাণ, ১০.৭৭ কিঃ মিঃ কার্পেটিং রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নগরীতে ২২৬.৮৮ কিঃ মিঃ ড্রেন নির্মাণ ও ৪ টি পাম্প হাউজ নির্মাণ (আলুতলা দশগেট, মতিয়াখালী খাল, লবনচরা খাল এবং ১নং কাষ্টমঘাট) এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩০২ কোটি টাকা। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যানজট নিরসনে ও জনসাধারনের নিরাপদ রাস্তা পারাপারে নগরীর রেল ষ্টেশনের সামনে যশোর রোডে, শিববাড়ি মোড় ও দৌলতপুর বিএল কলেজ মোড় এলাকায় ৩টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। নগরীতে চলাচলকারী জনসাধারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে ১০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে ৩১টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও রাস্তার বাতির জন্য পোলসহ সোলার ও নন-সোলার এলইডি লাইট (২১ আইটেম) স্থাপন করা হবে এত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৩ কোটি ১২ লক্ষ টাকা।
প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা হিসেবে কেসিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পরিবেশগত উন্নতি শহরে উন্নয়নের জন্য কৌশলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ কৌশলের আওতায় পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং উন্নত নাগরিক সেবা দেয়া সিটি কর্পোরেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কেসিসি সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত ২৮৬৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। এই ব্যয়ের মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ৫৭৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার জোগান দেবে, বাকী অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে বাংলাদেশ সরকার। উন্নয়ন প্রকল্পের খসড়া বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর খসড়াটি জাতীয় অথনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। একনেকে অনুমোদন মিললে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন। এই অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করা, নগর শিশুদের শিক্ষা বিস্তার ও উন্নয়ন কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি মোকাবেলায় জলাশয় সংরক্ষন, খেলারমাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক নির্মাণ, প্রকল্প এলাকার জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা রোধ করণ, শহরের অর্থনেতিক কার্যক্রম সম্প্রসারন ও উন্নয়ন।
প্রকল্পগুলোর বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. এজাজ মোর্শেদ চৌধুরী জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত ২৮৬৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি খুলনা সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন করবে। এজন্য প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রকল্পটি পাশ হলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ণ, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নাগরিক সুবিধা ও নগরীর সৌন্দর্য অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে পরিবেশগত ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
সিটি কর্পোরেশন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক প্রকল্পের বিষয়ে বলেন, খুলনা নগরীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২,৮৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন। এই অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তার সংস্কার ও উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নতুন ড্রেন ও পাম্প হাউজ নির্মান, ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করা লক্ষে ৩১ ওয়ার্ডে কার্যালয় নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি মোকাবেলায় জলাশয় সংরক্ষন, খেলার মাঠ নির্মাণ , পার্ক উন্নয়ন ও শহরের বিভিন্ন মোড়/চত্ত্বর উন্নয়ন, প্রকল্প এলাকার জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৫০.৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২ তলা খুলনা সিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। এতে করে শহরের অর্থনেতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারন ও উন্নয়ন হবে।
সচেতন নগরবাসী মনে করছেন, এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন নগরী গড়ে উঠবে। বদলে যাবে খুলনার চিত্র, বাড়বে নাগরিক সুবিধা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম।