খুলনা-১ আসনে আওয়ামীলীগের-৯ বিএনপি ও জাপার একক প্রার্থী প্রচারনায় মাঠে

প্রকাশঃ ২০২৩-১০-১৪ - ১৮:২২

আজগর হোসেন ছাব্বির : জাতীয় সংসদের ৯৯ আসন উপকুলীয় উপজেলা দাকোপ এবং বটিয়াঘাটাকে নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসন। স্বাধীনতা পরবর্তীকাল হতে হিন্দু অধ্যুষিত আসনটিকে আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসাবে ধরা হয়। তবে বর্তমানে ভোটের সমীকরনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। দু’টি উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকাটিতে আজো লাগেনি কাংখিত উন্নয়নের ছোয়া। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে-৯ বিএনপি, জাতীয় পাটির্, ইসলামী আন্দোলন এবং সিপিবির ১ জন করে প্রার্থী প্রচারনায় মাঠে আছেন।
খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার গল্লামারী হতে সুন্দরবন পর্যন্ত এই নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৮৯৮৩১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১৪৪৩৩৩ এবং মহিলা ভোটার ১৪৫৪৯৮ জন। আসনটিতে মোট ১১০ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে। নৌকার দূর্গ হিসাবে খ্যাত এই আসনে আজো পর্যন্ত প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। অথচ ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা এই আসন থেকে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ পর সরকার গঠন করেন। উপকুলীয় এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান সমস্যা অব্যহত নদী ভাঙন, প্রতিনিয়ত দূর্যোগের মুখোমুখী হয়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঝপঝপিয়া নদীতে পানখালী ব্রীজের জনদাবী উপেক্ষা, সুন্দরবনকে ঘিরে সম্ভবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশ না ঘটা, প্রতিশ্রুত গল্লামারী-নলিয়ান সড়ক বাস্তবায়ন না হওয়াসহ নানা উন্নয়ন বঞ্চনার কারনে ভোটাররা অনেকটা হতাশ ক্ষুদ্ধ। অধিকাংশ ভোটারদের অভিযোগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির ভোট ব্যাংক দাকোপ বটিয়াঘাটা দেশের উন্নয়নের মূল স্রোত ধারার সাথে যুক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এই ব্যর্থতার জন্য এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের অদক্ষতা এবং অবহেলাকে দায়ী করেন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় অন্তত ৯ জন প্রার্থী সক্রিয় প্রচারনায় আছেন। বর্তমান এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস আবারো দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। তবে বয়স এবং স্বাস্থ্যগত কারনে সরকারী কর্মসূচীর বাইরে তাকে ভোটের প্রচারনায় তেমন দেখা যায়না। বর্তমান সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডঃ গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবার সরাসরি ভোটে অংশ নিতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে আছেন। সাবেক এমপি এবং খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ননী গোপাল মন্ডল আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে নিজ অনুসারীদের সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচারনায় মাঠে আছেন। অনুরুপভাবে তরুন প্রজন্মের নেতা শিল্পপতি খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল গোটা নির্বাচনী এলাকায় প্যানা পোষ্টারসহ দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচারনায় মাঠে আছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং বার বার নির্বাচীত উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খানের পক্ষে তার সমর্থকরা গাড়ী বহর নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গনসংযোগ করছেন। মনোনয়নের দাবীতে বর্তমান সময়ে ব্যাপক গনসংযোগ ও সরকারের উন্নয়ন কাজের লিফলেট বিতরন করে চলেছেন স্বাধীনতা পরবর্তীকালের তুখোড় ছাত্রলীগনেতা বর্তমান দাকোপ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত ৬ বারের ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায়। এ ছাড়া ও দলের মনোনয়ন চেয়ে গনসংযোগ করছেন বাংলাদেশ হিন্দু কল্যান ট্রাস্টের খুলনা ও ঝিনাইদাহ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাষ্টি খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নান্টু রায় ও সাবেক সচীব ড. প্রশান্ত কুমার রায়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শেখ সোহেলের মনোনয়ন দাবী করে দু’টি উপজেলার তরুন নেতৃত্ব তার পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রচারনায় না থাকলেও দলের সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নে অপ্রতিদ্বন্দি যোগ্য নেতৃত্ব এবং দাকোপ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন শেষ মূহুর্তে দলের কাছে মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন গুঞ্জন আছে। অপরদিকে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসাবে খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব আমির এজাজ খান আন্দোলন সংগ্রামে কর্মসূচী পালনের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে আছেন। সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির এ আসনে সাংগঠনিক অবস্থা অতীতের তুলনায় অনেকটা নাজুক। নানা ক্ষোভ আর হতাশার জায়গা থেকে দলটির নিবেদীত প্রান অধিকাংশ নেতাকর্মিরা দলত্যাগ এবং নিষ্কিৃয় হয়ে আছেন। দলটির হেবিওয়েট নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় একমাত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলার সহসভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ এবং খুলনা জেলা সিপিবির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও বটিয়াঘাটার সভাপতি অশোক কুমার সরকার নিজ নিজ দলের একক প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন। তবে শেষ পর্যন্ত যদি সব দল নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে এখানে নৌকার সাথে ধানের শীষ প্রতিদ্বন্দিতায় আসতে পারে এমন ধারনা অভিজ্ঞ মহলের ।