খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশঃ ২০২৩-০৪-০৬ - ১৭:১২

ইউনিক ডেস্ক : রমজান হলো রহমত, বরকত, মাগফিরাত আর নাজাতের পবিত্র মাস। শান্তির বার্তা আর মুক্তির নিশ্চয়তা নিয়ে আমাদের হৃদয় মানসে সমুপস্থিত হয়েছে রমজান। মানবজীবনের আকাক্সিক্ষত বহু গুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের আরাধ্য মাস হলো এই রমজান। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোত্তম মাস রমজান; যাতে রয়েছে মানুষ ও মানবতার জন্য পরম শিক্ষা। তাই মহানবী (সা.)-এর কাছে এ মাসের তাৎপর্য ছিল খুবই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তিনি এ মাসের পরিপূর্ণ শিক্ষা ও বরকত লাভের উদ্দেশে দুই মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। মহান আল্লাহর কাছে তার মিনতি ছিল- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবানের বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। রমজান পর্যন্ত আয়ুষ্কাল প্রলম্বিত হলেই তো সিয়ামব্রত পালনের মধ্য দিয়ে একজন মুসলিম পরম রবের প্রত্যাশিত সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে। সেজন্যই রমজানের আগমন ও রমজানে নিজেকে দেখতে পাওয়ার মিনতি ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে মহানবী (সা.) পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মূলত মানবেতিহাসের একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ আল কুরআনুল কারিমের জন্যই রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব। পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস হিসেবেই রমজান তার স্বকীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘শাহরু রামাদানাল্লাযি উনযিলা ফিহিল কুরআন’ অর্থাৎ এ হলো রমজান মাস, যাতে অবতীর্ণ হয়েছে আল কুরআন। সুতরাং রমজানের মর্যাদার পেছনে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের প্রাসঙ্গিকতাই অবধারিত। আর কুরআনুল কারিমের নির্দেশনার ভিত্তিতেই আমরা মাহে রমজানের সিয়াম সাধনাকে আবশ্যিক ইবাদত হিসেবে পেলাম।

যেমন- ‘কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম কামা কুতিবা আলাল্লাযিনা মিন কাবলিকুম লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ অর্থাৎ তোমাদের ওপর রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিও ফরজ করা হয়েছিল; আশা করা যায় যে, তোমরা খোদাভীরুতা অর্জন করতে পারবে। পবিত্র রমজানের রোজাব্রত পালনের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে তাকওয়া তথা খোদাভীতির গুণাবলি ধারণ করে নিজেকে মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তোলা। সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করে চলা, পরম রবের সামনে আনুগত্যের মস্তক অবনত করে দেয়া এবং সর্বত্র আল্লাহপাকের উপস্থিতি ও সবকিছু প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতার প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তার কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি অর্জনই হচ্ছে তাকওয়ার মূল কথা; আর এ মহৎ গুণটিই একজন মানুষ মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাই আমাদের সবারই উচিত, সন্তুষ্টচিত্তে মাহে রমজানকে স্বাগত জানানো।

এই মাস সহানুভূতির আর এই সহানুভূতির প্রতিফল হলো রোজাদারের রিজিক বৃদ্ধি হয়ে যাওয়া। এই মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করার বিনিময়ে তা পাপাচার মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হয়। সেহরি খেলে পুণ্য হয় এবং ফেরেশতারা তাদের কল্যাণ কামনা করেন। কোনো কর্তৃপক্ষ এই মাসে কোনো শ্রমিকের কাজ হালকা করে দিলে তার প্রতিদানে প্রভুর ক্ষমা অর্জিত হয় এবং রোজাদারকে পানি পান করালে তার বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাদের কেয়ামতের ময়দানে হাউজে কাউসারের সুপেয় পানি পান করাবেন। এতদ্ব্যতিত আরো অনেক কল্যাণের নিশ্চয়তা দেয় রমজান; তাই আমরা মাহে রমজানকে হৃদয়-গভীর থেকে স্বাগত জানাই।