গাজা যুদ্ধের এক বছর, বর্বরতার রেকর্ড ভেঙেছে ইসরায়েল

প্রকাশঃ ২০২৪-১০-০৭ - ১৩:৫২

ডেস্ক নিউজ : ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলার ঘটনা বর্বরতার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এই সংঘাতের ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার মানুষ।

ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির ৪১ হাজারেরও বাসিন্দা নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখের মতো ফিলিস্তিনি। দখলদার দেশটির হামলায় ভূখণ্ডটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। হামলার বছর পূর্তি হলেও এখনো যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো প্রতিদিন শোনা গেছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও মৃত্যুর খবর।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ চার কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি হবে। এসব ধ্বংসস্তূপ ২০০৮ থেকে গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা ভূখণ্ডে সঞ্চিত আবর্জনার ১৪ গুণ এবং ২০১৬-১৭ সালে ইরাকের মসুলে হওয়া যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের পাঁচ গুণের বেশি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি খান ইউনিসে চলে যায়।

এক বছর ধরে চালানো ইসরায়েলি হামলার পর বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন। তারা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১১ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ
গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্তির আগের দিন রোববার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তারা। এ সময় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে কোথাও পুলিশ বাধা দিয়েছে, কোথাও শান্তিপূর্ণ হয়েছে আবার কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। রোববার ফিলিস্তিনিপন্থী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। ওয়াশিংটনকে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করার দাবি জানান তারা।

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাসের কাছে প্রতিবাদ করে বহু বামপন্থী মানবাধিকার কর্মী। এ সময় পুলিশ তাদের সমুদ্রতীরবর্তী কম্পাউন্ডের কাছাকাছি যেতে বাধা দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে শত শত মানুষ পার্লামেন্টের সামনে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। শনিবার জোহানেসবার্গ এবং ডারবানেও গাজাপন্থীরা মিছিল করে।

বিবিসি জানায়, শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। লন্ডনে ডাউনিং স্ট্রিট অভিমুখে পুলিশের কড়া পাহারায় কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেন। সে সময় পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। জার্মানির হামবুর্গ শহরে ফিলিস্তিন ও লেবাননের পতাকা নিয়ে ৯৫০ জন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন।

প্যারিসের রিপাবলিক প্লাজায় ফিলিস্তিনি ও লেবাননের নাগরিকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে কয়েক হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ইতালির রোমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে যুদ্ধবিরতির দাবিতে ফিলিস্তিনি সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন।