স্পোর্টস ডেস্ক : মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছিল উদ্বোধনী জুটি। দৃঢ় ভিত চমৎকারভাবে কাজে লাগালেন জস বাটলার ও ওয়েন মর্গ্যান। জোড়া সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়লো ইংল্যান্ড। ক্রিস গেইলের ব্যাটিং বীরত্বে চারশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জেতার আশা জাগিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে শেষটায় ব্যবধান গড়ে দিলেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। রোমাঞ্চকর ম্যাচে দারুণ এক জয় তুলে নিল সফরকারীরা। গ্রানাডায় চতুর্থ ওয়ানডেতে ২৯ রানে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ৪১৮ রান তাড়ায় দুই ওভার বাকি থাকতে ৩৮৯ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলারদের চোখের পানি-নাকের পানি যেন এক হয়ে গিয়েছিল গ্রানাডার ব্যাটিং স্বর্গে। ছক্কা হজম করেছেন দুই দলের সব বোলারই। ২৪ ছক্কা হাঁকিয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। ২২ ছক্কায় জবাব দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ সব মিলিয়ে হয় রেকর্ড ৪৬ ছক্কা। ২০১৩ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ৩৮ ছক্কা ছিল আগের সর্বোচ্চ। চার-ছক্কা থেকে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হয়ে গেছে এই ম্যাচে। ৬৪ চার আর ৪৬ ছক্কা থেকে এসেছে ৫৩২ রান। আগের রেকর্ড ছিল ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৮৭ চার ও ২৬ ছক্কায় ৫০৪ রান। ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটির দৃঢ়তায় ভালো শুরু পায় ইংল্যান্ড। ১৩ ওভার ৫ বলে জনি বেয়ারস্টো ও অ্যালেক্স হেলস গড়েন একশ রানের জুটি। ৩১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে থামান ওশেন টমাস। ইংলিশ ওপেনারের ৪৩ বলে খেলা ৫৬ রানের ঝড়ো ইনিংস গড়া চারটি করে ছক্কা-চারে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান জো রুটকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন গতিময় পেসার টমাস। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছবি: ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৩ বলে আট চার ও দ্ ুছক্কায় ৮২ রান করা হেলসকে বিদায় করে ইংলিশদের কিছুটা চাপে ফেলে দেন অ্যাশলি নার্স। দুইশ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যান মর্গ্যান ও বাটলার। এক সময়ে দুই ব্যাটসম্যানেরই রান ছিল ৯৬। আগে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান বাটলার। এই কিপার-ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারে সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬০ বলে। জেসন হোল্ডারকে ছক্কা হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর মর্গ্যান বেশিক্ষণ টিকেননি। অধিনায়কের ৮৮ বলে খেলা ১০৩ রানের ইনিংস সাজানো আট চার ও ছয় ছক্কায়। ২৬তম ওভারে ক্রিজে যাওয়া বাটলার ফিরেন শেষ ওভারে। তার আগে ছাড়িয়ে যান নিজের ব্যক্তিগত সেরা ১২৯ রান। ক্যারিয়ারে প্রথমবার দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস খেলে ফিরেন ৭৭ বলে ১২ ছক্কা ও ১৩ চারে ১৫০ রান করে। মর্গ্যান-বাটলার ঝড়ে শেষ ১০ ওভারে ১৫৪ রান তুলে চারশ ছাড়ায় ইংল্যান্ড। বড় রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। জন ক্যাম্পবেল ও শেই হোপকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন মার্ক উড। তবে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের কক্ষপথে ফেরান গেইল। ড্যারেন ব্রাভোর সঙ্গে উপহার দেন ১৭৬ রানের দারুণ এক জুটি। চারটি করে ছক্কা-চারে ৬১ রান করা ব্রাভো ও শিমরন হেটমায়ারকে তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন উড। দলকে তিনশ রানের কাছে নিয়ে ফিরেন গেইল। বিস্ফোরক বাঁহাতি ওপেনারের ৯৭ বলে খেলা ১৬২ রানের ঝকঝকে ইনিংস গড়া ১৪ ছক্কা ও ১১ চারে।এই ইনিংস খেলার পথে ব্রায়ান লারার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। ওয়ানডেতে তিনশ ছক্কা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচশ ছক্কার মাইলফলকে পৌঁছান। একই সঙ্গে রোহিত শর্মার ২৩ ছক্কা ছাড়িয়ে গড়েন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। চলতি সিরিজে তিন ইনিংসে তার ছক্কা ৩০টি। অ্যাশলি নার্সের সঙ্গে ৮৮ রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা জাগিয়ে রাখেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পাওয়া কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান, হাতে ছিল চার উইকেট। ৪৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে চারটি উইকেটই তুলে নেন রশিদ। ৪৩ রান করা নার্সকে ফেরানোর পর বিদায় করেন ৩৬ বলে ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা ব্র্যাথওয়েটকে। পরের দুই ব্যাটসম্যান খুলতে পারেননি রানের খাতা। ৩৮৯ রানে শেষ চারটি উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডেতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ উইকেটে ৩৭২। ৮৫ রানে ৫ উইকেট নেন লেগ স্পিনার রশিদ। পেসার উড ৪ উইকেট নেন ৬০ রানে। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে দলকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া কিপার-ব্যাটসম্যান বাটলার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। আগামী শনিবার সেন্ট লুসিয়ায় হবে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।