গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হলেই রঙ-বেরঙয়ের অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হতো গোপালগঞ্জে বিল অঞ্চল গুলো। শীত মওসুম জুড়েই দেখা যেত সাদা বক, বালিহাঁস, মাছরাঙ্গা, সারস, পানকৌরীসহ দেশি বিদেশি অসংখ্য পাখি। খাল-বিল, জলাশয়গুলোতে পুঁটি, খলসে, মাছ খাওয়ার লোভেই নানা প্রজাতির অতিথি পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আশ্রয় নিতো চলন বিলে। দিগন্ত জুড়া উন্মুক্ত হাওয়ায় পাখা মেলে এক বিল থেকে আরেক বিলে উড়াউড়ি করত। অপরূপ রুপে সেজে উঠতো প্রকৃতি। মাছ আছে, দিগন্ত জোড়া বিল আছে, আসছে অতিথি পাখিও। কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থন্বেশি মহল পাখির এমন অবাধ বিচরণে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিষটোপ-পড়শিসহ নানা প্রকার ফাঁদ পেতে নির্বিচারে শিকার করছে এ সব অতিথি পাখি। বাঁশের খুটি, কলা পাতা, খেজুর ডাল বেতের পাতা। এ সব উপকরণ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ফাঁদ ৬ থেকে ৭ ফিট উঁচু। ফাঁদের সামনে বাঁশের মগডালে রাখা বক হাতে শিকারি দল বেঁধে উড়ে যাওয়া বক শিকার করছে। এ ভাবেই প্রতিদিন শিকারিরা বিলের বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে সারি সারি করে ফাঁদ পেতে এবং বিষটোপ ও বড়শি দিয়ে সাদা বক, বালিহাঁস, মাছরাঙ্গা, সারস, পানকৌরীসহ নানা প্রকার অতিথি পাখি শিকার করছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে গভীর রাত আর ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত এসব পন্থায় পাখি শিকার চলছে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের সামনে প্রকাশ্যে হাটে নেয়া হচ্ছে বিক্রির জন্য। রাতের শেষ প্রহর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত শিকার করা হয়েছে এসব পাখি। কেউ কেউ হাট-বাজারে ফেরি করেও বিক্রি করছে এসব পাখি। অথচ প্রশাসন রয়েছে নীরব দর্শকের ভুমিকায়। তারা সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি বক ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, বালিহাস ৪শ থেকে ৫শ টাকা এবং তেলকুচ পাখি ৩০০ খেকে ৪০০ টাকা এবং চাকলা পাখি প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পাখি শিকারি জানান, তারা গোপালগঞ্জে বিভিন্ন বিলের ফসলের মাঠে মাঠে খুঁটি পুঁতে কলাপাতা, খেজুর ডাল দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ফাঁদের সামনে একটি বাঁশের মগডালে রাখা হয় শিকারি বক। আকাশ দিয়ে বকের ঝাঁক নির্মিত ফাঁদের ওপর দিয়ে দল বেঁধে উড়ে যাওয়ার সময় শিকারি তার শিকারি বকটিকে নাচাতে থাকে। এক পর্যায়ে শিকারি বকটি ডাকাডাকি শুরু করলে উড়ন্ত বকের ঝাঁকটি বিশেষ ভাবে নির্মিত ঘরের (ফাঁদ) ওপর বসে। এ সময় তারা ভেতর থেকে একে একে বক গুলোকে ধরে ধরে খাঁচায় ভরে। এছাড়া বিশেষ কায়দায় বিষটোপ দিয়েও এসব অতিথী পাখি শিকার করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাংবাদিক জয় বলেন, শুধু যে পানকৌড়ি, বালি হাঁস, বক পাখি শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ছে তা নয়। শীতের আগমনে এ অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে আশ্রয় নেওয়া নানা প্রজাতির অতিথি পাখি শিকার করছে এক শ্রেণির স্বার্থন্বেশি মহল। বছরের পর বছর ধরে এসব পন্থায় বক শিকার করে বাজারে বিক্রি হলেও পাখি শিকার রোধে কার্যত কোন আইনী ব্যবস্থার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। এতে ক্রমশ্য বাড়ছে পাখি শিকার। তাছাড়া পাখি শিকারে প্রশাসনের দুর্বল অভিযান ও নজরদারি না থাকায় এ বছর পাখির আগমন কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে এ অঞ্চলের সৌন্দর্য্য। শিকারিদের হাত থেকে পাখি শিকার বন্ধ না করলে গোপালগঞ্জের বিল গুলোতে এক সময় কোন পাখির আগমন ঘটবে না বলে মনে করে তিনি।
একই সাথে পাখি শিকার বন্ধে আরো সচেতনতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ বন বিভাগের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাখি শিকার রোধে আমরা এ বছর এখনো কোন অভিযান করি নাই। শুনেছি পাখি শিকার চলছে, হয়তো খুব শিঘ্রই পাখি শিকার বন্ধে অভিযান চালানো হবে।