গ্রীষ্মের আগেই তীব্র সংকট, নলকূপে মিলছে না পানি

প্রকাশঃ ২০২৩-০৩-২১ - ১৪:২৮

যশোর অফিস : গ্রীষ্মের আগেই পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে যশোরে। পৌর শহরের পাশাপাশি পানির সংকটে পড়েছে যশোরের প্রায় সব উপজেলাগুলো। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট যেমন দেখা দিয়েছে তেমনি দেখা দিয়েছে কৃষি জমিতে সেচের পানির সংকট। ফলে বোরো ধানের জমিতে সেচ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষকেরাও।

অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকার নলকূপ, টিউবওয়েলগুলোতে পানি না থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির খোঁজে এক টিউবওয়েল থেকে অন্য টিউবওয়েল ছুটে বেড়াচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা। এদিকে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ নলকূপে এখন পানি না থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেগুলো।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ নলকূপ ও টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা হয়। বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চলে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। বর্ষায় তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত, শীত ও বসন্তেও বৃষ্টিহীন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

যশোর বিএডিসি সেচ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে থাকা মানে সেচযন্ত্রের জন্য বিপদ সংকেত। আর এমন সময় চাঁচড়ার পানির স্তর পরিমাপক যন্ত্রে পানির স্তর দেখাচ্ছে ২৫ দশমিক ৬৫ ফুট নিচে। বিএডিসি সেচ প্রকল্প আওতায় যশোরে গভীর নলকূপ রয়েছে ১১৮টি এবং এলএলপির মাধ্যমে ১১৮টি সেচযন্ত্র দিয়ে যশোরের বিভিন্ন নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষি ক্ষেতে সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর নদীতেও মিলছে না পানি। ফলে এলএলপির মাধ্যমেও সেচ ব্যাহত হচ্ছে।

সদর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের চাষী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি শ্যালো পাম্প মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে থাকি। কিন্তু এ বছর শ্যালো মেশিনেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।’

চুরামনকাঠি এলাকার চাষি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘পানির সংকট দেখা দেওয়ায় বোরো ধানের চাষাবাদ নিয়ে চিন্তিত। যত দিন যাচ্ছে পানির ততোই সংকট বাড়ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হবার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’

ঝিকরগাছা উপজেলার শিওরদাহ গ্রামের চাষি হায়দার বলেন, ‘টিউবওয়েল চেপে পানি ওঠানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর নলকূপে তো পানিই নেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অন্যদিকে খাবার পানি দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে।’

বিএডিসি সেচ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পানির যে স্তরে আছে তাতে সমস্যা দেখা দেয়নি। আমাদের নিকট পানি সংকটের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে এই পানির স্তর যদি ২০ ফুট নিচে চলে যায় তাহলে অধিকাংশ সেচযন্ত্রে পানি উঠবে না। গত বছরে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম ছিল। যার কারণে এ বছর পানির লেয়ার আরও নেমে যেতে পারে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, পৌরসভার বাইরে সদর উপজেলায় ৩০-৩৫ ফুট নিচে পানির লেয়ার নেমে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো বেশিরভাগ টিউবওয়েলও অকেজো হয়ে পড়েছে। পৌরসভার মধ্যে পানির সমস্যাটা বেশি দেখা দিচ্ছে।

পৌরসভার স্টেডিয়াম পাড়া এলাকার বাসিন্দা মিলন বলেন, ‘টিউবওয়েলগুলোতে পানি ওঠা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যে টিউবওয়েল, নলকূপ থেকে পানি উঠতেছে সেখানে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে।’

শহরের কাজীপাড়া আমতলা এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময়টাতে পানি নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ব্যবহারের পানি তো দূরের কথা খাবার পানিরও সংকট দেখা দেয়। দূর থেকে পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়।’

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশল কামাল আহমেদ বলেন, যশোর পৌরসভায় গভীর নলকূপ রয়েছে ২৯টি। আর তারা পাম্প রয়েছে ৫০০টি। এর বাইরে টিউবয়েল, সাবমর্সিবলের সংখ্যা রয়েছে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।