ঢাকা অফিস : চারটি মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আজ বিকালে দেশে ফিরছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে তিন মাস পর লন্ডন থেকে ঢাকায় আসছেন তিনি। তাকে সংবর্ধনা দিতে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি দল ও দলের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর এলাকায় জমায়েত হয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে রাস্তার পাশে অবস্থান নেবেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে চারটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জিয়া অরফানেজ মামলা, জিয়া অরফানেজ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, কুমিল্লায় নাশকতা মামলা এবং মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা। এই চারটি মামলার মধ্যে একটি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৯ অক্টোবর ধার্য আছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হলেও ভীত নন খালেদা জিয়া। এমনকি দলের নেতা-কর্মীরাও পরবর্তী পদক্ষেপ দেখতে অপেক্ষায় আছেন। তবে দেশে ফিরেই খালেদা জিয়া আদালতের ধার্য করা তারিখগুলোতে হাজিরা দেবেন। সেক্ষেত্রে দেশে ফিরেই প্রথম হাজিরা দেওয়ার কথা রয়েছে ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। এদিন ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে পারেন বিএনপি প্রধান। তবে লন্ডন থেকে দীর্ঘ সফরের ধকলের ওপর নির্ভর করবে, তার হাজির হওয়ার বিষয়টি।
বিএনপি নেতারা এরইমধ্যে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন ১৯ অক্টোবর আদালতে হাজিরা দিতে। গত ১২ অক্টোবর চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে দলীয় মহাসচিবের মাধ্যমে আইনজীবীরা এ বার্তা পৌঁছে দেন খালেদা জিয়ার কাছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া ১৮ অক্টোবর বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে দেশে এসে পৌঁছাবেন। দীর্ঘ পথ জার্নি করার পরে তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের কিছুটা অস্বস্তিবোধ করাটাই স্বাভাবিক। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৯ অক্টোবর। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের মামলায় হাজির দেওয়ার কথা রয়েছে তার।’
মাসুদ আহমেদ তালুকদার আরও বলেন, ‘১৮ অক্টোবর দেশে ফিরে পরদিনই আদালতে হাজির হওয়ার সামর্থ্য থাকবে কিনা তার, সেটা অনুমান করে বলা সম্ভব না। তবে এটা নিশ্চিত, ম্যাডাম জিয়া আইন মান্যকারী নাগরিক। তার বিরুদ্ধে কয়টা গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেটা, তিনি আদালত ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক। তিনি সুস্থবোধ করলে অবশ্যই আদালতে হাজিরা দেবেন।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৬ জুলাই খালেদা জিয়া লন্ডন যান। সেখানে তার পা, হাঁটু ও চোখের চিকিৎসা করানো হয় বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত নারী অধিকার বিষয়ক চেঞ্জমেকার জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাঁর (খালেদা জিয়া) ব্যবস্থা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা আছে। গ্রেফতারী পরোয়ানাটা আমাদের কাছে এসে যখন পৌঁছে যাবে, তখন আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা মঙ্গলবার পর্যন্ত থানায় পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। মঙ্গলবার বিকেলে মিরপুর ১৪ নম্বরের শহিদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে একাদশ শ্রেণীর নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সংবাদিকদের এ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আইজিপি বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে শুনেছি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তা এখনো থানায় পৌছায়নি।
তিনি আরো বলেন, কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে আনতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। যেহেতু খালেদা জিয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তাই তাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করতে হবে তা নয়, এটি আদালতের বিষয়।
অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মতো ভুল সরকার করবে না বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া দেশে আসবেন। উনার কিছুই হবে না। গ্রেফতার করে সরকার ভুল করবে না। কারণ, আমরা মনে করি রাজনৈতিক প্রভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা ইস্যু হয়েছে। যা কোর্ট না করলেও পারতেন।’ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মওদুদ বলেন, তিনি (খালেদা) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এতো বড় একজন নেত্রী তার বিরুদ্ধে এভাবে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করা ঠিক নয়। তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারী পরোয়ানা বাতিল হয়ে যাবে। এ ছাড়া বেগম জিয়া এসব বিষয়ে কখনও ভয় করেননি।’ তিনি বলেন, সকলেই জানে এমনকি আদালতও অবগত রয়েছেন যে, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। খালেদা জিয়া আদালত ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই চিকিৎসার কিছুটা অংশ বাদ দিয়েই দেশে চলে আসছেন।