চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে উপজেলা প্রশাসনের অধীন ৪টি ঘাটের ৩টি’র ইজারা নেই

প্রকাশঃ ২০২১-০৬-২২ - ০১:১১

সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের অধীন ৪টি ঘাটের ৩টিরই ইজারা নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ১টি মাত্র ঘাট যেটি কালাপানিয়া ফেরী ঘাট হিসেবে পরিচিত। সেটি চলতি বছরেও ৬ লক্ষ টাকার উপরে বাৎসরিক ইজারার বিনিময় স্থানীয় মনিরুজ্জামান আরমান চালাচ্ছেন।

সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে-সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের অধীন দক্ষিণ সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের দূর্গাচরণ মাছ ঘাট, পুরাতন ধুপির খাল মাছ ঘাট, ইজারা নিয়ে স্থানীয় দ্বন্ধের কারণে হাইকোট পর্যন্ত মামলা গড়ালে দীর্ঘদিন যাবৎ বাৎসরিক ইজারা পক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে সে দুটি মাছ ঘাট থেকে সরকার তার প্রাপ্ত ইজারা মূল্য না পেয়ে যেনোতেনো ভাবে খাস কালেকশন পাচ্ছে। এতে করে সরকার প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে।

অন্যদিকে উত্তর সন্দ্বীপের বর্তমান চলমান দুটি ফেরী ঘাট রয়েছে যার একটি কালাপানিয়া ফেরী ঘাট সেটি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর নির্দিষ্ট অংকে ইজারা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ বছরও স্থানীয় মনিরুজ্জামান আরমান ৬ লক্ষেরও বেশী মূল্যে বাৎসরিক ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন-দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নে ২ বছর আগে থেকে নতুন সৃজিত সন্দ্বীপ টু উড়িরচর ফেরী ঘাটটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন থেকে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া খাস কালেকশনের বিনিময়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে সরকার এখানেও তার নির্দিষ্ট অংকের প্রাপ্য রাজস্ব হারাচ্ছে।

এ ছাড়া এ ঘাটের কারনে পাশর্^বর্তী আমানউল্যা ও তেলির হাটের রাস্তার মাথায় ফেরী ঘাট দুটিও, যেগুলো ইতিপূর্বে বাৎসরিক ইজারার বিনিময়ে পরিচালিত হতো সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। আরমান আরো বলেন-দীর্ঘাপাড়ের ফেরী ঘাটটি সরকারি অনুমোদন ছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধভাবে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজসে পরিচালিত হওয়ায় তা বন্ধে গত ২৪/০৫/২০২১ ইং তারিখ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোট ডিভিশনে একটি রীট পিটিশন দাখিল করেছেন। এর আগে ১৩/০৪/২০২১ তারিখে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দীর্ঘাপাড় হতে উড়িরচর নৌ-রুটে অবৈধভাবে যাত্রী পারাপার বন্ধে আরো একটি দরখাস্ত প্রদান করেছেন।

এ প্রসঙ্গে দীর্ঘাপাড় ফেরী ঘাট পরিচালনাকারী আনোয়ার হোসেন টিটু’র বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন-ঘাট সৃজনের পর, পর পর ৩ বছর খাস কালেকশান প্রদানের বিনিময়ে ঘাট পরিচালনা করা যায় বলে তিনি জেনেছেন। তবে তিনি সরকারি ইজারাদার নন বলে জানান। তিনি ২০১৯ সালে ১ বছরের খাস কালেকশন এক সাথে প্রদানের বিনিময়ে অদ্যাবধি সেই নিয়মেই ঘাট পরিচালনা করে আসছেন। তিনি আরো বলেন-আমার ঘাটটি সন্দ্বীপের উত্তর মাথায় সর্বশেষ ইউনিয়ন দীর্ঘাপাড়ে অবস্থিত। এর দক্ষিণে আরো ৩টি ইউনিয়নে ঘাট রয়েছে। যেগুলো থেকে আমার ঘাটের দূরত্ব প্রায় ৬/৭ মাইল। দীর্ঘপাড়, সন্তোষপুর, আমানউল্যা এই তিনটি ইউনিয়নের অধিকাংশ লোকজনের উড়িরচরে যাতায়াতের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের সভায় একটি নতুন ঘাট সৃজনের প্রয়োজনীয়তার কথা উত্থাপণ করলে উপজেলা পরিষদের সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে আমাকে ঘাট সৃজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেটি এমপি মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন বলে তিনি দাবী করেন।

এ ব্যাপারে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী অফিসার জে পি দেওয়ানের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন-নতুন ঘাট সৃজন হলে সাধারনত ১ বৎসরের জন্য খাস কালেকশনের বিনিময়ে কাউকে পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তারপরের বছরই ইজারা বিনিময়ে ঘাট পরিচালনা করতে হবে। এটিই সরকারি নীতিমালা। এর ব্যত্যয় ঘটলে সরকার অবশ্যই নির্দিষ্ট অংকের ইজারার টাকা পাওনা থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। এছাড়া খাস কালেশনের বিনিময়ে কেউ ঘাট পরিচালনা করলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী খাস কালেকশন প্রদান করার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে এ ক্ষেত্রে ফাঁকিঝুকি দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তিনি উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলোর সরকারি প্রক্রিয়ায় ইজারার বিষয়গুলো দেখবেন বলে জানান।