চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করতে শিবির ক্যাডারকে কন্ট্রাক্ট

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-০৪ - ২০:৩২

মানস চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে হত্যা করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছে দুই ভাড়াটে খুনি। শিবির ক্যাডারকে হত্যার কন্ট্রাক্ট দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। এঘটনায় দ্বায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে থানা আওয়ামীলীগ।
মঙ্গলবার (২ জুন) ভোররাতে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ির এলাকা রেকি করতে গিয়ে ধরা পড়ে তারা। ধরা পরার পর দুই ভাড়াটে খুনি বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীন সজিবকে হত্যার পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে। তাদের ভাষ্যমতে পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম উঠে এসেছে বাজালিয়া ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও জামায়াত ক্যাডার সদ্য কারামুক্ত রাশেদের নাম। পরে তাদের পুলিশের কাছে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা। ধরা পড়া দুই ভাড়া করা খুনি হলো উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আব্দুল গনির ছেলে হাবিবুর রহমান (২৮) ও ছদাহা ইউনিয়নের উত্তর ছদাহা এলাকার মোহাম্মদ সিরাজের পুত্র তরিকুল ইসলাম জিসান (২৫)। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক একটি ভিডিও ফুটেজও ইতিমধ্যে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ভিডিওটিতে আটককৃতরা চেয়ারম্যান তাপস দত্তের পরিকল্পনায় রাশেদের সঙ্গী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সজিবের গতিবিধি অনুসরণ করার কাজ করছিল বলে স্বীকারোক্তি দেয়। সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শফিউল কবীর বলেন, বাজালিয়া থেকে ২ যুবককে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে। ২ জনকেই আমরা সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায় সাতকানিয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈরি হওয়া সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার জন্য শিবির ক্যাডারকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের তাপস দত্তের বিরুদ্ধে।এই ঘটনা ঘটেছে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মীরপাড়া এলাকায়। হামলার টার্গেট হওয়া ওই সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম গিয়াস উদ্দীন সজীব। তিনি বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। গিয়াস উদ্দীন সজীব বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীর অনুসারী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জেরে চেয়ারম্যান তাপসের লোকজনের হাতে শহীদুল্লাহ চৌধুরীর লোকজন বেশ কয়েকবার মারধর ও হামলার শিকার হয়।
তাদের দুইজনের এ রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বেশ কয়েকবার চেষ্টাও করেন। মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে উপজেলা আওয়ালী লীগ বৈঠক হয়েছে ।
সম্প্রতি বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হওয়ার পর নিজ বাড়িতে থাকতেন না সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দীন সজীব। তিনি শহীদুল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে সোমবার রাতে অবস্থান করেন। তাকে অনুসরণ করে সেখানে যায় হাবিবুর রহমান ও মো. তরিকুল ইসলাম নামে দুই যুবক। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। আটক হাবিবুর রহমান ও তরিকুল ইসলাম স্থানীয়দের সামনে স্বীকারোক্তিও দেন। তারা জানান, রাশেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তাদের ভাড়া করেছেন। জনপ্রতি ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা মোট চারজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দীন সজীবের ওপর হামলা চালাতে আসেন।
রাশেদ চৌধুরী বাজালিয়া এলাকার শিবির ক্যাডার। তার ভাই মাসুদও শিবির ক্যাডার। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। রাশেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন বলে জানা গেছে। আটক হাবিবুর রহমান ও তরিকুল ইসলাম বর্তমানে সাতকানিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানান সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ।
বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীন সজীব বলেন, চেয়ারম্যান তাপস দত্ত আমাকে মেরে ফেলার জন্য শিবির ক্যাডার রাশেদ চৌধুরীকে কন্ট্রাক্ট করেছেন। রাশেদ অন্য এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে এনে আমার ওপর হামলা করতে এসেছিলেন। গিয়াস উদ্দীন সজীব বলেন, তাপস দত্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর তার জন্য আমি কাজ করেছি। তার পক্ষে কাজ করেছি। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেছেন। কয়েকজনের ওপর হামলাও করিয়েছেন তার লোকজন দিয়ে। তারপর থেকে আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করেছি। শহীদুল্লাহ চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, তার সঙ্গে রাজনীতি করার কারণে চেয়ারম্যান আমার ওপর ক্ষুব্ধ। ইতি পূর্বে চেয়ারম্যান তাপস দত্ত চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা প্রশান্ত চৌধুরী জিশুর সাতকানিয়ার বাজালিয়া বাড়িতেও তার লোকজন দিয়ে হামলা করান বলে অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দীন সজীব।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, চেয়ারম্যান তাপস দত্তের সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করান, এটা তো মেনে নিতে পারি না। তাকে এসব বন্ধ করতে অনেকবার অনুরোধ করেছি কিন্তু তিনি শুনেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান তাপস দত্ত জনান বলেন, আমি কাউকে হামলা করতে বলিনি। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমার সঙ্গে শহীদুল্লাহ চৌধুরী, গিয়াস উদ্দীন সজীবের কোনো বিরোধ নেই।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী জানান এই ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খ জনক। আমরা শংর্কিত দলের অন্তকোন্দলের কারণে জামাতের ক্যাডারকে ব্যবহার করে দলীয় নেতা কর্মীদের হত্যা পরিকল্পনায় যুক্তদের বিরুদ্ধে শীর্ঘই দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে একাধিক সদস্যরা নাম প্রকাশের না করার শর্তে দৈনিক আজকালের খবরকে জানান তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া পর একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিল। তারা আরো জানান চেয়ারম্যান তাপস দত্ত দিকে বেলায় চেয়াম্যান হলে ও রাত ৩টা পর্যন্ত তার নিজস্ব পেট্রোল পাম্পের পাশে সন্ত্রাসী পরিকল্পনা করে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই নজরুল ইসলাম আসামী হাবিবুর রহমান (২৮) তরিকুল ইসলাম জিসান (২৫) কে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য আদালতে রিমান্ডে আনার আবেদন করেছেন বলে দৈনিক আজকালের খবরকে নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শফিউল কবীর।