চট্টগ্রাম ব্যুরো: আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার হিন্দু ত্রিপুরা ৭০ পরিবারকে রাইফেলের
নল ঠেকিয়ে নিজদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে৷ তাদের জমিতে ঘর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে এই শিল্প গ্রুপ। বসতি হারানোর ভয়ে দিশেহারা অসহায় দরিদ্র এই জনগোষ্ঠী।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ড ত্রিপুরা পাড়ার ৭০টি দরিদ্র ত্রিপুরা হিন্দু পরিবারের বসবাস৷ তাদের বসতি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিশাল কারখানা। আবুল খায়ের গ্রুপ জায়গাটি তাদের দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরা গোষ্ঠীকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। বছর তিনেক আগে থেকে ত্রিপুরাদের জায়গায় আবুল খায়ের গ্রুপের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সীমানা বেড়া নির্মাণ করতে গেলে সে সময়েও ত্রিপুরাদের সাথে ঝামেলা বাঁধে। সে সময় ঝামেলা মিটে গেলেও আবারো ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে ঘর নির্মাণে বাধা ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠে।
শুক্রবার (১৪ মে) আবারো ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরদের উচ্ছেদ করে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আবুল খায়ের গ্রুপ৷ তাদের বসতির উপর দিয়ে কাঁটা তারের বেড়া দিতে এলে ত্রিপুরারা তাতে বাধা দেন৷ এসময় কারখানাটির সশস্ত্র সিকিউরিটি বাহিনী আনসার ও স্থানীয় কতিপয় লোকজন মিলে অস্ত্র ঠেকিয়ে অসহায় ত্রিপুরাদের বসতি থেকে সরে না গেলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ত্রিপুরা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
‘হিন্দু ত্রিপুরাদের কান্না’—রাইফেল ঠেকিয়ে ৭০ পরিবারকে ‘সরাতে’ মরিয়া আবুল খায়ের গ্রুপ 1
এ ব্যাপারে আবুল খায়ের গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (এডমিন) মোহাম্মদ ইমরুল কাদের ভূইয়া বলেন, ত্রিপুরা পল্লীর ১ কিলোমিটার উত্তরে আবুল খায়ের গ্রুপের জায়গায় এসে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘর নির্মাণ করছিল। ঈদের ছুটির সুযোগে এ কাজটি তারা করেছিল। এটি কোন উচ্ছেদ নয়, এটি আবুল খায়ের গ্রুপের জায়গা। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমাদের জমির সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কাগজের উপর ভিত্তি করে তিন দিনের মধ্যে তিনি একটি সমাধান দেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আবুল খায়েরের মত বড় শিল্প গ্রুপ কারও জমি দখল করবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। কিছু ব্যক্তি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।
ত্রিপুরা এলাকার দ্বিতীয় কারবারি কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, আবুল খায়ের গ্রুপ আমাদের জায়গায় ঘর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে। আমরা প্রাণ ভয়ে আছি। কয়েক বছর আগে ইউএনও স্যার আমাদের জঙ্গল সলিপুরে বস্তি এলাকায় একটি জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য বলেছিল। জায়গাটি আমাদের পছন্দ হয়নি বলে যাইনি। আমরা আমাদের পুর্বপুরুষের ভিটা ছেড়ে যেতে চাইনা। আমরা পাহাড়ে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
তবে উচ্ছেদ মানতে রাজি নয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়। তাঁর মতে এটাকে উচ্ছেদ বলা যাবে না। কারণ আবুল খায়েরের দাবি করা জায়গাটিতে কোন ত্রিপুরা বসতি নেই। ত্রিপুরা বসতির পাশের একটি খোলা জায়গা। আমরা জায়গাটি মাপজোপ করে তারপর বলতে পারবো আসলে জায়গাটি কার। আমরা উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য বলেছি। এর আগে এ জায়গায় ভুমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের সময় আবুল খায়ের গ্রুপ জায়গাটি তাদের দাবি করে ঘর নির্মাণে বাধা দিয়েছিল।