চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও সার্কেলের সার্ভেয়ার নাজমুলের বিরুদ্ধে ১২ লক্ষ ঘুষ দাবির অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০২১-০৫-২৬ - ০১:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভূমি অফিসের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ভূমিমন্ত্রী চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশ ভূমি অফিসের একাধিক ঝটিকা অভিযান চালানোর পরও দুর্নীতি থামানো যায়নি।  ভূমি মন্ত্রীর অভিযানের কয়েকজন সার্ভেয়ারকে বদলি করলেও দুর্নীতির দায়ে এখনো পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হয়নি।  চট্টগ্রামের এল এ শাখা সহ একাধিক ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারদের দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার শাস্তি মূলক ব্যবস্থা করেনি জেলা প্রশাসক।  চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার নাজমুলের রয়েছে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। তিনি এসিল্যান্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করল ভুক্তভোগীরা ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়না।

জানা যায় সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর ভূমি অফিস চান্দগাঁও সার্কেলের এসিল্যান্ড ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ পাওয়া গেলেও উক্ত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ে তদবির চালাচ্ছেন সার্ভেয়ার নাজমুল।  ঘুষ দাবির ঘটনায় এসিল্যান্ড ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল জসিম উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানায়, নগরীর পশ্চিম ষোলশহরস্থ বিবির হাট তাজমহল কমিউনিটি সেন্টারটি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নিজস্ব জায়গায় জসিম উদ্দীন পরিচালনা করে আসছে। কমিউনিটি সেন্টারটি সংস্কার করার জন্য সিডিএ থেকে ৬ তলার প্ল্যানও অনুমোদন নেয়। জসিম উদ্দীনের নামে ওয়াসা, বিদ্যুৎ, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং টেক্সসহ যাবতীয় কাগজ পত্র রয়েছে। চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভূমি মামনুন আহমেদ অনীক ও সার্ভেয়ার নাজমুল হাসান ভূমি অফিসে আসা লোকজনকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পাঁচলাইশ থানাধিন পশ্চিম ষোলশহরস্থ বিবির হাট এলাকার মৃত ইউসুফের পুত্র তাজমহল কমিউনিটি সেন্টারের মালিক মো. জসিম, মো, কাউসার, মো. নাঈমের বিরুদ্ধে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার জোহরা বেগম(৪০), মো. জাহেদ(১৮)এর পক্ষ থেকে এডিএম কোর্ট (মহানগর) চট্টগ্রাম ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। গত ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সার্ভেয়ার নাজমুল হাসান ও তৎকালিন চান্দগাঁও সার্কেল সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম সরেজমিন তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেন। এর আগে আদালতের নির্দেশে পাঁচলাইশ থানার মর্ডেল থানার তৎকালিন এস আই নুরুল আলম মিয়া ২০১৯ সালের ১১ মার্চ উভয় পক্ষের কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে সরেজমিন তদন্তের প্রেক্ষিতে একটি প্রতিবেদন দেন।

উক্ত প্রতিবেদনের পর গত ২২ মার্চ একই স্থানের সার্ভেয়ার নাজমুল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক আগের প্রতিবেদনের বিপরীত আর একটি প্রতিবেদন দেন। উক্ত প্রতিবেদন দেয়ার আগে সার্ভেয়ার নাজমুল হাসান ও এসিল্যান্ড ১২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। প্রতিবেদন পক্ষে দিতে হলে এসিল্যান্ড এবং অফিসের লোকজনকে ১২ লাখ টাকা দাবি করে।  এছাড়াও রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে গত ২০১৮ সালে আইয়ুব আলীর পরিবারের তথ্য গোপন করে ওয়ারিশন সনদ নেন। উক্ত সনদে পরিবারের ৭ সদস্যদের মধ্যে ১ম স্ত্রী লাকী আকতারের তথ্য গোপন করায় গত ১২ জানুয়ারি আগের ওয়ারিসন সনদ বাতিল করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম আর একটি সনদ দেন। তথ্য গোপন করে মামলা করার ঘটনায় জোহরা বেগম ও জাহেদের দায়েরকৃত মামলাটি খারিজ করে দেন। এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জসিম উদ্দীনকে ভূমি অফিসের লোকজন ও যার পক্ষে রির্পোট দিয়ে তারা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছে। অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দীন জানান, উক্ত জায়গায় যাবতীয় কাগজ পত্র এবং দখল প্রায় তিন যুগ ধরে আমাদের পক্ষে এবং আমার কমিউনিটি সেন্টার আছে। এসিল্যান্ড ও সার্ভেয়ার সরেজমিন তদন্তে এসে সবার সামনে আমার কাছে স্বীকার করে যান সব কিছু আমার পক্ষে। অফিসে যাওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাঠান এবং আমার কাছে ১২ লাখ টাকা লাগবে বলে দাবি করেন সার্ভেয়ার নাজমুল হাসান, টাকা না পেলে নাকি এসিল্যান্ড স্বাক্ষর করবে না এবং ডিসি অফিসেও কিছু টাকা দিকে হবে বলে ঘুষ দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য চান্দগাঁও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার নাজমুল হাসানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর তাহার কমেন্টস নেওয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলো তিনি কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি।

এ বিষয়ে চান্দগাঁও সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীকের সাথে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেনি।

চান্দগাঁও ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায় সার্ভেয়ার নাজমুল হাসান লক্ষ টাকার নিচে ঘুষ নেয় না। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও টাকার বিনিময়ে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছে।
তার গ্রামের বাড়ি ও চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে শত কোটি টাকার সম্পদ। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এসিল্যান্ড ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি আসার পর তদন্ত চলছে, করোনাকালিন অফিস ছুটি হওয়ার কারণে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।  উল্লেখ্য চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।