চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২৬ কনটেইনার আমদানী নিষিদ্ধ পণ্য ধংসের নামে পাচারের প্রক্রিয়া চলছে

প্রকাশঃ ২০২১-০২-২৮ - ২১:১৫

রিটন দে লিটন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানী করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না করলে আমদানিকারককে ১৫ দিনের নোটিশ দিয়ে ওই পণ্য নিলামে তোলে কাস্টম হাউস। মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যসহ বিভিন্ন আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যের কনটেইনার সরবরাহকারী প্রতিষ্টান নিজ খরচে ধবংসের উদ্যেগ নিলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ডাম্পিং স্টেশনে কাস্টমসের বর্জ্য ধংসে অনিহা ধংস কাজে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্টানের মালিকদের।৩২৬টি কনটেইনারে থাকা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টন পণ্য ধ্বংসের নামে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।

চট্টগ্রাম বন্দর সুত্রে জানা যায় চট্টগ্রাম বন্দরের Garbage Cleaning Contractor লাইসেন্স বিহীন একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যনেজ করে যত্রতত্র লোক দেখানো কয়েকটি কনটেইনার ধংস করে বাকী কনটেইনার পাচারের ফলে কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জানা যায় সম্প্রতি ৩২৬ কনটেইনারে থাকা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টন পণ্য ধ্বংস করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চসিক ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ধংস না করে তাদের পছন্দ মতো স্থানে ধংস কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য প্রতারক চক্র তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে। মুনতাহা এন্টারপ্রাইজ, কেডি শিপিং ও রিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্টান।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দর, চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও মেয়র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাবরে “চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির” কর্তৃক প্রেরিত লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে Garbage Cleaning Contractor লাইসেন্স না থাকা সত্বেও কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম ও ডেপুটি কমিশনার মাজেদুল  টাকার বিনিময়ে ২০৩ টি কন্টেইনার ধংস করার জন্য মেসার্স আব্দুর রহমান শাহ ডিপো ( নাছির নগর ) উত্তর হালিশহর, টোল রোড, বারণী ঘাটা সাগর পাড়স্থ ছোট একটি ফসলী জমিতে সামান্য গর্ত করে ধংস কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করার কারণে প্রতার চক্রটি কয়েকটি কনটেইনার ধংস করে বাকী কনটেইনারের আমদানী নিষিদ্ধ পন্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ধংসকৃত পন্য পাচারের অভিযোগে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্তৃক ধংস করা নষ্ট পণ্য পাচারের অভিযোগে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে বন্দরে দীর্ঘদিন যাবৎ আটকে থাকা প্রতিটি কনটেইনার ধংস করার জন্য এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান করেন কনটেইনার ধংসের অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্টানের মালিকেরা।

অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ আটকে থাকা আমদানী নিষিদ্ধ প্রতিটি কনটেইনার ধংস করার ফলে কাস্টমসের কোনো প্রকার রাজস্ব আয় হচ্ছে না বরং নাম সর্বস্ব প্রতিষ্টনের মালিকেরা ধংসের নামে নষ্ট পণ্য বাজারে পাচারে কারণে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

“চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির” লিখিত আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় চসিক ডাম্পিং স্টেশনে কাস্টমসের বর্জ্য ধংসের অনুমতি প্রদান করিলে চসিকের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কয়টি কনটেইনার ধংস হয়েছে তার প্রকৃত হিসাব লিপিবদ্ধ থাকিবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, আমাদের গরীব দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরা ধংসকৃত পণ্য নিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাব আটক করেছিল বলে শুনেছি আমাদের মামলা করতে বলেছিল, পরে রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন (‌র‌্যাব)কর্তৃক ধংস করা নষ্ট পণ্য পাচারের অভিযোগে তিন সদস্যকে ৩লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল, আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কনটেইনার ধংস জন্য কাস্টমসের কোনো ব্যয় বহন করে না। একটা ধংস কমিটি করে দিয়েছি, কমিটির ত্ববধানে কনটেইনার সবরবাহ প্রতিষ্টান নিজ খরচে ধংস কমিটি সদস্যদের উপস্থিতিতে ধংস কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এতে অন্যতা হওয়ার সুযোগ নাই। চট্টগ্রাম বন্দরের Garbage Cleaning Contractor বিহীন প্রতিষ্টানের মাধ্যমে ধংস কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন ধংস কার্যক্রম পরিচালনায় কোন লাইসেন্স লাগে না চাইলে যে কেউ কাজটি করতে পারে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (মেট্রো) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী বলেন, কাস্টমসের পণ্য ধ্বংস করতে আমাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। সুবিধামত জায়গা দিতে না পারায় সে কাজ এখনো আটকে আছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে আমরা চাই কাস্টমস সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনে এ কাজ করুক। কিংবা সেই জায়গায় না হলেও সিটি কর্পোরেশনকে সঙ্গে নিয়েই কাস্টমস পণ্য ধ্বংসের কাজটি করুক।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ডাম্পিং স্টেশনে কাস্টমসের বর্জ্য ধংসের ব্যপারে জানতে চাইলে চসিক উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম বলেন, আমরা গড়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম সিটির প্রায় আড়াই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করে ধ্বংস করি। কাস্টমসের যে বর্জ্য ধ্বংসের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে তা চসিক’র ডাম্পিং স্টেশনে করা সম্ভব। তবে নিয়মানুযায়ী প্রতি টন বর্জ্যরে জন্য কাস্টমসকে ভ্যাটসহ ৫৭৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া কাস্টমসের তত্ত্বাবধান ও খরচেই ওই বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সদরের উপপরিচালক (বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা) ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম অফিসের আপত্তির কারণে মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পূণরায় একটি চিঠি দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে সিন্ধান্ত নিবেন।