চাঁদাবাজি করে কোটিপতি চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও কেরানি

প্রকাশঃ ২০২১-০৬-৩০ - ০২:১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির নামে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির কথিত সভাপতির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি ও সমিতির টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম- দুর্নীতিতে জড়িয়ে শতকোটি টাকা অবৈধ উপার্জনে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায় চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির ৮ হাজার টাকা বেতনের কেরানি মোহাম্মদ ইউনুছ এক সময়ের পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতিতে চাকুরী নিয়ে দায়িত্ব নেয় সমিতির চাঁদা তোলার। সদস্যদের টাকা সমিতির ফান্ডে জমা না দিয়ে তিনি ভূয়া খরচ দেখিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে বনে যান কোটিপতি। শুরু হয় বিলাস বহুল জীবন যাপন গড়ে তোলেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। সমিতির কেরাণী ইউনুছ বাকলিয়া থানা ও কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা তুলে নিজেই আত্মসাত করে আসছে প্রায় তিন যুগ ধরে। ইউনুছের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে কৌশলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল জুলুম ও নির্যাতন করার অভিযোগও রয়েছে।

১৯৯২-৯৩ সালে চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির যাত্রা শুরু হওয়ার পর কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন ভেঙ্গে ২০০৫ সালে চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতি নামে নামকরণ করা হয়। ২০১০-১১ সালে হায়দার চৌধুরীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ক্ষমতা কেড়ে নেয় বর্তমান সভাপতি হারুনুর রশিদ। অবৈধভাবে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। সমিতির নামে নিয়মিত চাঁদা তোলেন সমিতির কেরানি (সচিব) মো. ইউনুছ। কেরানি ইউনুছ ও সভাপতি হারুনুর রশীদকে নিয়ে পুরো সমিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়। সমিতির কোন সদস্য কেরানির বিরুদ্ধে কিছু বলার চেষ্টা করলে কৌশলে উক্ত সদস্যকে সমিতি থেকে বের হয়ে যাওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি করেন এবং বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় ইউনুছ। সমিতির সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও ট্রাক প্রতি দৈনিক চাঁদার টাকা প্রশাসন ও পুলিশসহ বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের নামে খরচ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইউনুছ।

হারুন সভাপতি হওয়ার পর তার ছেলেদের দিয়ে চাক্তাই সিন্ডিকেট করে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ, ছালাসহ চোরাই ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। সভাপতি হারুনুর রশীদ ও তার পরিবার গত ১০ বছরে প্রায় শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ যাহা তদন্ত করলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।

সমিতির কেরানি ইউনুছ সমিতিরপ্রায় কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার পাশাপাশি পটিয়া আশিয়া মল্লা পাড়ায় বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ, চাক্তাই এলাকায় আলীশান বাসায় সৌখিন জীবন যাপন করতে গিয়ে চাক্তাই বাসায় বিদেশী কুকুর পালন, কুকুরকে দেখাশুনা করতে ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজের মানুষ, ছেলেদের বিদেশে লেখা পড়ার করার মত তথ্য পাওয়া গেছে। সমিতিরি বর্তমান সভাপতি ও কেরানি ইউনুছের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর জামাল উদ্দীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহাদুর, রাইচ মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দীন, ছালা পলিথিন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্বাস উদ্দীন, ট্রাক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা নিজাম উদ্দীন কাজল, ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন মিন্টুসহ অনেকে। সমিতির অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে একাধিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন ট্রাক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা নিজাম উদ্দীন কাজল। এবিষয়ে চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও ট্রাক সমিতির উপদেষ্টা নিজাম উদ্দীন কাজল বলেন, সমিতির আয় ব্যয় হিসাব এবং সমিতির নামে গণহারে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে বলে জানান। এ বিষয়ে চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দীন বলেন, সমিতির কেরানি ইউনুছের বিরুদ্ধে সমিতির ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমানিত হতে ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে বিয়ষটি জানার পর তিনি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির কেরানি মোহাম্মদ ইউনুছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেন এবং পটিয়া গ্রামের বাড়িতে বিল্ডিং করার বিষয়টি স্বীকার করেন। বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগটি সঠিক না জানান। চাঁদাবাজি করে থাকলে পুলিশ কেন মামলা করছে তারা থানায় কেন যাচ্ছে না তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন।