চাল আমদানির সঙ্গে দামও বাড়ছে

প্রকাশঃ ২০২১-০২-১৪ - ১৫:৩২

হিলি প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি আগের তুলনায় বেড়েছে। আমদানি বাড়লে সাধারণত দাম কমার কথা। কিন্তু হিলি স্থলবন্দরে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে চালের আমদানি আরও বাড়লে দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন আমদানিকারকরা। দেশের কৃষকদের উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চালের আমদানিশুল্ক বাড়িয়ে ৬২.৫ ভাগ করে সরকার। এতে করে ২০১৯ সালের ৩০ মে থেকে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে লাগামহীন হয়ে পড়ে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দেশের বিভিন্ন আমদানিকারককে ৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। শুল্ক ৬২.৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ১৫ ভাগ নির্ধারণ করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হলে দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু গত কয়েকদিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়ছে। বর্তমানে স্বর্ণা জাতের চাল পাইকারিতে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা, আঠাশ জাতের চাল ৪৪ থেকে বেড়ে ৪৭ টাকা, শম্পা ৫৪ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে কেজিতে যা আরও ১-২ টাকা বাড়তি দামে বেক্রি হচ্ছে। হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছিলাম, ভারত থেকে চাল আমদানি হওয়ার ফলে দাম কমে আসবে। কিন্তু আমদানি হলেও চালের দাম কমবে কী, আরও বাড়ছে। এতে করে আমাদের মতো গরিব মানুষের খুব কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে আয় হয় তাতে করে এতো দামে চাল কিনে খাওয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই খুব কষ্টে আছি।’ চাল কিনতে আসা শ্রমিক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিনমুজর মানুষ। অন্যের বাড়িতে কামলা দিয়ে খাই। চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে আমাদের সংসার তো চলে না। এক কেজি চাল কিনতে হচ্ছে ৪৫ টাকা বা তারও বেশি দামে।’ ক্রেতা রহিমা বেগম ও নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও চাল কিনেছি, তাতে করে ভারত থেকে চাল আসার কারণে দাম ৪-৫ টাকা করে কম ছিল। হঠাৎ করে আবারও দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা করে বেড়ে গেছে, এতে করে আমাদের মতো নিন্ম আয়ের মানুষ খুব সমস্যায় আছে।’ স্থলবন্দরে চাল কিনতে আসা আশরাফুল হক ও ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বন্দরে স্বর্ণা জাতের চাল ৪২ টাকা ৭০-৮০ পয়সা, রত্না জাতের চাল ৪৬-৪৭ টাকা ৫০ পয়সা, শম্পা কাটারি চাল ৫৫ টাকা ২০-৩০ পয়সা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে কয়েকদিন আগে এই চাল কেজিতে ২-৩ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল।’ হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘সরকারি অনুমোদনের পর আমদানিকারকরা ব্যাপক পরিমাণে চালের এলসি খুলেছেন। বেশ কিছু চালবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ভারতের অভ্যন্তরে তীব্র যানজটের কারণে সঠিক সময়ে চালগুলো যেমন দেশে প্রবেশ করতে পারছে না, তেমনি চাহিদামতো চাল আমদানি করা যাচ্ছে না। তবে আমরা রফতানিকারদের ওপর চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন উপায়ে চাল আমদানির চেষ্টা করছি। এক লাখ টনের অধিক চালের এলসি দেওয়া রয়েছে। আশা করছি, যানজটসহ অন্য সমস্যা কেটে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল আমদানি হবে। এতে করে দাম কমবে। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে, আমরা শুধু আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। মিলার ও আড়তদারদের কাছে যে চাল মজুত রয়েছে, তারা তা বাজারে ছাড়ছে না। আমদানিকৃত চালের সঙ্গে তারা যদি সঠিকভাবে জমাকৃত চাল ছেড়ে দেয়, তবে অবশ্যই দাম কমে আসবে।’ হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে বন্দর দিয়ে আগে যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক চাল আমদানি হতো বর্তমানে সেখানে ৪৫ থেকে ৫০ ট্রাক আমদানি হচ্ছে। বন্দর দিয়ে গত ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৩৫৪টি ট্রাকে ১৪ হাজার ৫শ’ টনের মতো চাল আমদানি হয়েছে। চাল প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে খালাসের সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্দর থেকে চাল খালাস করে যেন দ্রুত দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা যায়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে কর্তৃপক্ষ।’