মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর(দিনাজপুর): দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া এখন এখানকারকৃষকের ঘরে ঘরে। বিশেষ করে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত আমূল বদলে যাচ্ছে এই এলাকার কৃষি। সেইসাথে প্রযুক্তিগত সহায়তায় বেশি লাভবান হচ্ছেন এলাকার উদ্যমী কৃষকরা। ফলে দিন বদল হচ্ছে কৃষকদের, গতি সঞ্চার হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির।কৃষিক্ষেত্রে যোগ হওয়া এমনই এক প্রযুক্তি ব্যবস্থা হচ্ছে কমিউনিটি ও আদর্শ বীজতলা। শস্য ভান্ডার বৃহত্তর উপজেলা চিরিরবন্দরে বীজতলা তৈরী ও চাষে কৃষকের মাঝে এখন ব্যাপক সাড়া জাগাচ্ছে। উপজেলায় প্রতিটি কমিউনিটি বীজতলা তৈরীতে বর্তমানে কৃষকের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। দিনদিন এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরীও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কমিউনিটি বা আদর্শ বীজতলা তৈরী করায় কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কম লাগছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৯১৯ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫১ হেক্টর উফশী ও ৬৮ হেক্টর হাইব্রিড। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশেষ প্রকল্পন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম এনএটিপি আওতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ৬৫৫ হেক্টর জমিতেকমিউনিটি বা আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা বপন করা হয়েছে
সরেজমিনে গেলে কথা হয় উপজেলারফতেজংপুর এলাকার কৃষক রশিদুল ইসলাম, কৃষাণি রোকেয়া, গিনাসা গ্রামের কৃষক ছাত্তার,রহমানউদ্দিন,সাতনালা গ্রামের, নজরুল ইসলাম,সাইদুর ও মুকুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান,উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে কমিউনিটি বা আদর্শ পদ্ধতিতে যেকোন জমিতে বীজতলা তৈরি করতে পেরে তারা লাভবান হচ্ছেন। আদর্শ বীজতলা থেকে চারা তোলা খুবই সহজ। আগের পদ্ধতির চেয়ে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করলে বীজ, শ্রম, সার, জায়গা, সেচ ও সময়সহ খরচ অনেক কম লাগে। কিন্তু ফলনও ভালো পাওয়া যায়।তাই ওই বীজতলা উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরা সময়, টাকা ও শ্রমসহ সবদিকে লাভবান হচ্ছেন। সাইতাড়া ইউনিয়নের কৃষক রহিজ উদ্দিন বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে যে জায়গায় ৫০ কেজি বীজ লাগত, সেখানে কমিউনিটি পদ্ধতিতে ৩৫ কেজি বীজ লাগে। তাতে বীজতলা তৈরী থেকে অন্যান্য সব মিলে এক হাজার ২শ টাকা খরচ কম হয়েছে। অথচ আগে ৫০ কেজি বীজ এর চারা দিয়ে ২.৫ একর জমি রোপন করা যেতো। আর কমিউনিটি বীজতলার ৩৫ কেজি বীজের চারা দিয়েও ওই জমিটুকু রোপন করা সম্ভব। তাছাড়া আগের চেয়ে ফলন ভালো হয়, সেবা যতœ করাও সহজ হয়। খরচ প্রায় অর্ধেক লাগে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ওকৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান, কৃষি বিভাগের তরফ থেকে কমিউনিটি বা আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে কৃষককে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বীজতলা তৈরির মৌসুমে ছুটির দিনেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠে ঘুরতে হচ্ছে। এতে ওইসব কৃষকরা বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও নিজ উদ্যোগে কমিউনিটি ও আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরীর দিকে ঝুঁকছেন।আর এটি হলে চিরিরবন্দর উপজেলায় কৃষি অর্থনীতির সচলতা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।