মঞ্জুরকৃত ৭৩ পদ শূন্য
কামরুল হোসেন মনি: মহানগরীর মীরেরডাঙ্গা ১০০ শয্য বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। খুলনা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে একটি মাত্র বক্ষব্যাধি হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীদের চাপ থাকে বরাবরই। মঞ্জুরকৃত ৭৩টি পদ শূন্য থাকার কারণে রোগীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে হাঁপিয়ে ওঠেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ উদয় বরণ ম-ল বলেন, মঞ্জুরকৃত ১৮৪টি পদের মধ্যে ৭৩টি পদ দীর্ঘ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। প্রতিমাসে জনবল সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। নেই কোন যানবাহন। পরিচ্ছন্ন কর্মী ১৫ জনের বিপরীতে মাত্র ৩ জন রয়েছে। রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হাঁপিয়ে ওঠা লাগে। নিয়োগ জটিলতার কারণে এমন পরিস্থিতি বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে অবহিত করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণি মিলে সর্বমোট মঞ্জুরকৃত ১৮৪টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৭৩টি পদ দীর্ঘ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। কেউ অবসরজনিত কারনে কেউ বা বদলিজনিত কারণে আবার কেউ প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণি পদমর্যাদার ১১টি মঞ্জুরকৃত পদের মধ্যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট ও মেডিকেল অফিসার ২ জনের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে একজন মেডিকেল অফিসার প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত আছেন। দ্বিতীয় শ্রেণি পদমর্যাদার মধ্যে উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া নার্সিং সুপারভাইজার ৬ জনের মধ্যে ৩ জন রয়েছেন। এর মধ্যে আবার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে একজন সংযুক্ত ও ৩ জন অবসরে গেছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৭ জন ও স্টাফ নার্স ৩ জনের পদ শূন্য। তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী স্টুয়ার্ড অবসর ও ওয়ার্ড মাস্টার বদলিজনিত কারণে পদটি শূন্য রয়েছে। একজন চালক ছিলো সেও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত আছেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে অফিস সহায়ক ২৫ জনের মধ্যে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে। কুক/মশালচী ৫ জনের বিপরীতে রয়েছে ২ জন। এছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মী ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন রয়েছে। অবসর ও বদলিজনিত কারণে পদগুলো শূন্য রয়েছে দীর্ঘ বছর ধরে।
সূত্রটি জানায়, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে অনেক সময় অন্যত্র হাসপাতাল থেকে এখানে প্রেষণে কর্মরত থাকলেও কিছুদিন পর ওপর লেবেল থেকে সুপারিশ করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। যার কারণে অনেক সময় অন্যত্র সরকারি হাসপাতাল থেকে এখানে আনা হলে বেশিদিন থাকেন না। পরিচ্ছন্ন কর্মী সঙ্কট থাকার কারণে হাসপাতালের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন থাকে প্রায়ই সময়।
হাসপাতালের অফিস সহায়ক এস এম কামরুল ইসলাম বলেন, অফিস সহায়ক মঞ্জুরকৃত ২৫টি পদের মধ্যে ১১টি পদ দীর্ঘবছর ধরে শূন্য রয়েছে। এই হাসপাতালের সবচেয়ে এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিচ্ছন্ন কর্মীর সঙ্কট। ১৫ জনের বিপরীতে মাত্র ৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী ২৪ ঘন্টা পালাক্রমে শ্রম দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে আবার নানা কারণে ছুটিতেও যাচ্ছেন। যার কারণে পরিচ্ছন্নকর্মী স্বল্পতা কারণে মাঝেমধ্যে হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় মনে হয়। নেই কোন ওয়ার্ড মাস্টারও।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, অনেক সময় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জনবল সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যখন চাহিদা পাঠান, তখন কিছু সরকারি হাসপাতাল থেকে এখানে প্রেষণে লোক কর্মরত থাকেন। তারাই আবার বিভিন্ন তদবির ও লবিং করে কয়েক মাসের মধ্যে আবার অন্যত্র চলে যান। এখানে কেউ সহজে পোস্টিং নিতে চান। অনেকে মনে করেন এই হাসপাতালে রোগীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই এই রোগে জড়িয়ে যান এমন ভয়ে আতঙ্কে থাকেন। কেউ বা বলে থাকেন, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে অন্যত্র থেকে এখানে বদলি করলে সেটা শাস্তিমূলক বদলি বলে কানাঘুষা শুরু করেন।