সেলিম হায়দার, তালা : সাতক্ষীরা-১ (তালা ও কলারোয়া) উপজেলা নিয়ে গঠিন এ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। তবে প্রার্থী মনোনয়নে ১৪ দলীয় মহাজোট অস্বস্তিতে থাকলেও স্বস্তিতে রয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আওয়ামীলীগ এবার নিজ দলীয় প্রার্থী চাইছে। কিন্তু বর্তমান সংসদ সংসদ সদস্যের দল ওয়ার্কার্স পার্টি ফের জোটগত আসনটি ছাড় চায়, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ও জাসদও চায় আসনটি। এদিকে সরকারি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীও প্রায় এক ডজন নেতারা। তবে একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি ।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন । এবারও তিনি জোটগত প্রার্থী হতে চান। আবার মনোনয়ন চেয়ে মাঠে কাজ করছেন মতাসীন আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট নেতারা। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ন-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সরদার আমজাদ হোসেন ও এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চান সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত। মাঠে রয়েছেন জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলুও।
বিএনপির একক প্রার্থী জেলার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ আসনের দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে তাকে দেখতে চায় । অনদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্য ইজ্জতউল্যাহ এ আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থিতা চান। তবে মাঠে ময়দানে তার প্রচার প্ররোচনা কম ও জনগণের কাছে তিনি অপরিচিত মুখ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চান শরিক দলের কাউকে নয়, সাতীরা-১ আসনে দলের যে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। যদিও সেেেত্র বিপত্তি রয়েছে। কারণ জোটগত নির্বাচনে এবারও ওয়ার্কার্স পার্টি যে ক’টি আসন ভাগে পাবে- সেগুলোর মধ্যে প্রার্থী মনোনয়নে দলটিতে এগিয়ে আছেন বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখতও দলীয়ভাবে প্রার্থী। তাই সাতীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘১৯৬২ সাল থেকেই আমি জনগণের রাজনীতি করছি। সংসদ সদস্য থাকাকালে তালা-কলারোয়ার পাশাপাশি সমগ্র সাতীরার উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। যার সুফল মানুষ এখনও ভোগ করছেন। এজন্য মনোনয়নের ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী’। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি বলেন, ‘আমার বাবা শহীদ স ম আলাউদ্দিন মৃত্যুর দিন পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করেছেন। বাবার মতো আমিও কাজ করতে মনোনয়ন চাইছি’।
বর্তমান সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ‘এমপি হওয়ার পর থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। এজন্য এবারও আমি মনোনয়ন পেতে আশাবাদী’। সৈয়দ দিদার বখত বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আমাকেই মনোনয়ন দেবে। কারণ, আমি ছাড়া দলের কোনো বিকল্প প্রার্থী নেই’।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আমি নিশ্চিত মনোনয়ন পাবো এবং এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এ আসনের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব। সব মিলিয়ে সাতীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া ১৪ দল বা মহাজোটের জন্য যেমন কঠিন হবে, তেমনি একক প্রার্থী থাকায় আসনটির দখল নিতে পারে বিএনপি।