মো:নজরুল ইসলাম,ঝালকাঠি : বিভিন্ন খাল ভরাটের কারনে ঝালকাঠিতে বোরো আবাদের এই শুকনো মৌসুমে সেচ সংকট চরম আকার ধারন করেছে। যদিও বিগত ৯ বছরে বিএডিসি সেচ কর্তৃপক্ষ ৯৭ কিলোমিটার খাল খননের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বলে জানাযায়। এদিকে খাল খনন না করায় কৃষকরা সেচের পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেনা এই সময়ে। তাই ধান রোপনের আগে চারা সবুজ থাকলেও পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষকদের প্রশ্ন খাল খননের নামে এ টাকা গেল কোথায় তা খতিয়ে দেখা দরকার।
ঝালকাঠি জেলার অধিকাংশ খাল ভরাট থাকায় ইরি আবাদের এই মৌসুমে পানি না পাওয়ায় সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। মেশিন দিয়েও পানি উঠানো যাচ্ছেনা। ঝালকাঠি ও নলছিটির অধিকাংশ এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। পার্শবর্তী ডোবা নালা থেকে হাতে সেচ দিয়ে জমিতে পানি দিচ্ছে কৃষকরা। বিএডিসির আওতায় ১৬ টি সেচ নালার কাজ সমাপ্ত হলেও এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি বিদ্যুতের অভাবে। এছারা ব্লকের আরো কিছু পাম্প বসানোর পর অকেজ হয়ে পরে থাকায় সেচের অভাবে বোরো আবাদ করতে পারছেনা কৃষকরা। এ প্রসঙ্গে নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের দেড় কুরা জমির মালিক খলিলুর রহমান জানান, আমাদের এই এলাকায় গত বছর এবং এ বছর মাটির নীচে পানির লাইন বসালেও বেশির ভাগ এলাকায় তা চালু করা হয়নি। সেচের এই মৌসুমে পানি না পেলে কৃষকরা এগুলো দিয়ে কি করবে। সরকার আমাগো উপকারের জন্য এসব দিলেও বিএডিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারনে এর সুফল সময়মত কৃষকরা পাচ্ছেনা। এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন না দেয়ায় অনেক নালা চালু করা যাচ্ছেনা। তাছারা যে নালার সহায্যে বিদ্যুতের মাধ্যমে পানি দিয়ে বোরো আবাদ করা হচ্ছে তাতে খরচ বেশি পরছে বলেও এ এলঅকার কৃষকরা জানিয়েছে। কৃষক আঃ হালিম মিয়া জানান, আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্ঠায় মেশিন দিয়ে খাল থেকে পানি উঠিয়ে সেচ দিতে বিঘা প্রতি খরচ পরে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। অথচ বিএডিসির মাধ্যমে ব্লকে পানির বিনিময়ে কাঠিপারা ব্লক ম্যানেজার আলী আকবর যে ধান কেটে নিয়ে যায় তার দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। সে নিজেই জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে যায়। এ কারনেও অনেক কৃষক বোরো আবাদ করছেনা। এসব বিষয়ে ঝালকাঠি বিএডিসি সেচ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলেও কৃষকদের অভিযোগ। কৃষ্ণকাঠি এরাকার কৃষক লাবু সিকদার, নয়াবাড়ি এলাকার আঃ ছবুর মিয়া, আঃ আজিজসহ অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার ছোট বড় খাল গুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অনেক খালের জায়গা বেদখল করা হয়েছে। এসব খাল গুলো খনন করা হলে বোরো আবাদের এই মৌসুমে সেচ সংকট হতো না। একমাত্র বড় খালে কিছু পানি থাকায় সেখান থেকে দূরবর্তী জমিতে পানি সেচ দিতে প্রচুর টাকা খরচ পরায় অনেকে বোরো আবাদ ছেরে দিয়েছে। শুনেছি বিএডিসির মাধ্যমে প্রতি বছর খাল খননের জন্য বরাদ্দ এলেও তা কোথায় কিভাবে খরচ দেখানো হয় তারাই জানেন। কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হলেও বাস্তবতার সাথে কোন মিল পাওয়া যাচ্ছেনা। বিএডিসির চালু পাইপ দিয়ে পানি সেচের খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে বোরো আবাদে। পাশাপাশি শুকনো জমি আবাদে ট্রাকটর মেশিনও বিকল হয়ে পরছে। ঝালকাঠি বিএডিসি সেচ বিভাগ সূত্রে জানাযায়, বিগত ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৭২ টি সেচ নালা নির্মান করা হয়েছে। এর মধ্যে চালু আছে ৫৬ টি। বাকি ১৬ টি নালা বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে চালু করা যাচ্ছেনা। ৪৬ হাজার মিটার সেচ নালার মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। এছারা ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৮ হাজার ৪৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মো. রবিউল ইসলাম, সহকারি প্রকৌশলী, বিএডিসি, ঝালকাঠি জানান, ঝালকাঠির ভরাট খাল গুলো সেচ কমিটির মাধ্যমে তালিকা করে খনন করা হবে। এছাড়া ২০ টি স্কিমে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে সংযোগ পেলে সেগুলো চালু হলেও কৃষক সেচ সুবিধা পাবে। ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এবার বোরো আবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকদেরকে সেচ ও সুষম সার প্রয়োগের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রায় শতাধিক ভরাট খালের তালিকা প্রতি বছর বিএডিসি সেচ বিভাগে ও এলজিইডিতে প্রদান করা হয়। এগুলো সেচের আওতায় এনে সেচ দেয়া সম্ভব হবে।