রবিউল ইসলাম মিটু, যশোর : টানা বর্ষণে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বর্ষণ ও মৃদু ঝড়ো হাওয়ায় যশোরের সবজি ও আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় আধাপাকা ধান মাঠে নুয়ে পড়েছে। ফলে তির মুখে পড়েছেন চাষীরা। সবচেয়ে বেশি তির শিকার একটু নিচু জমিতে সবজি চাষীরা। কৃষকদের বক্তব্য বর্ষা আরও কয়েকদিন থাকলে তাদের ব্যাপক লোকসানের শিকার হতে হবে।
কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় আমন ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া সবজি চাষ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। অধিকাংশ এলাকার পাকা ও আধাপাকা ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এসব ধানক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, আগাম জাতের কিছু ধান ক্ষতির মুখে পড়লেও অন্যান্য জাতের ধানে বৃষ্টিতে তেমন প্রভাব ফেলবেনা।
আর যশোর জেলার ৮ উপজেলায় এবার ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যশোর সদরেই সবজি চাষ করা হয় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদরের চুড়ামনকাটি, কাশিমপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নের মাঠের পর মাঠ বিভিন্ন সবজি চাষ করে কৃষকরা। শুরুতে ভাল ফলনও দেখা দেয়। অনেকে চড়া মূল্যে সবজি বিক্রি করে লাভবান হলেও অনেকে এখনও কোন সবজিই বিক্রি করতে পারেনি। তারা স্বপ্ন দেখতে থাকেন ফসল বিক্রির। কিন্তু তাদেও সেই স্বপ্ন পূরণে বাধ সাধে অতিরিক্ত বৃষ্টি। সবজি অঞ্চল খ্যাত যশোরের চুড়ামনকাঠি, হৈবতপুর, সাতমাইল, বারীনগর, নোঙরপুর এলাকার শত শত চাষি এখন চরম বিপাকে ।
তবে বৃষ্টিতে কী পরিমান সবজি নষ্ট হয়েছে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। অনেক চাষি সবজি পচে যাওয়ার ভয়ে আগাম সবজি তুলে বাজারে তোলার চিন্তা করছেন। এতে কৃষক আর্থিকভাবে তির মুখে পড়বেন। লাভবান হবেন খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ আছে, পাইকারী ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে পুঁজি করে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করেন।
চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক আয়নাল হক জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বেগুন, সিম, মুলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছেন। বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সবজি ক্ষেতে পানি জমে গেছে। তিনি বলেন, দু’একদিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না কমে ,এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। একই এলাকার চাষি আব্দুল হাকিম বলেন, ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের অধিকাংশ চাষিই আগাম শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, সামনে ভারি বৃষ্টি হলে আমাদের ক্ষতি হবে বলে জানা তিনি। সবজি চাষিরা বলেন, বৃষ্টির কারণে মুলা, পালংশাক, বেগুন, করোলা, শিম ক্ষেতের ব্যাপক তি হয়েছে। এসব ক্ষেতে সবজি গাছের গোড়ায় পচন ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী গ্রামের কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, তার প্রায় ২ একর জমির অধিকাংশ ধান টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের নুয়ে পড়েছে। ধান চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
আব্দুর রহমান জানান, চলতি আমন মৌসুমে যশোরাঞ্চলে আগাম জাতের ব্রিধান-৬২, ৫৭ ও বিনা-৭ জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এসব ধান ইতি মধ্যে পেকে উঠেছে। কিছু এলাকায় ধান কেটে মাঠে বিছানো রয়েছে। এসব ধান এখন পানির নিচে।
জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপঙ্করদাস বলেন, একটানা বৃষ্টির কারনে কিছু কিছু এলাকার আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে তেমন একটা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবেনা। কারন বৃষ্টি হওয়ায় পোকার আক্রমন থেকে আমন ধান নিশ্চিত রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, যেসব সবজি ক্ষেতে পানি জমে গেছে সেসসব সবজি পানিতে পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কৃষক পানি সরিয়ে দিলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাঘারপাড়া উপজেলায় এবছর আমনের ফলন হয়েছে ২২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে। বৃষ্টিতে আমন ধানের তেমন ক্ষতি হবেনা বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন চলতি বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় ব্রিধান-৬২ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম জাতের এ ধান পেকে যাওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় ক্ষতি হলেও যেসব ধান এখনও পাকেনি সেসব ধান পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাবে। তবে ভারি বৃষ্টির কারনে অধিকাংশ এলাকায় আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, পাকা ধানগুলোর তির সম্ভাবনা কম থাকলেও যেসব ধান গাছের ফুল বা আধা-পাকা অবস্থায় রয়েছে সেগুলো মাটিতে শুয়ে পড়ায় প্রচুর পরিমাণে চিটা বা পচে যাওয়ার শংকা রয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে সবজির কিছু তি হয়েছে ঠিক। তবে সেটি এখন কী পর্যায়ে তা বলার সময় হয়নি। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টি হলে চাষিরা নিশ্চিত তির মুখে পড়বেন বলে তিনি আশঙ্কা করেন। তিনি এ অবস্থায় সবজি েেত জমে যাওয়া পানি সরাতে কৃষকদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে আমন ধান পড়ে যাওয়ায় কিছুটা ক্ষতি হবে তবে সেটি ব্যাপক কোন ক্ষতির মধ্যে পড়বেনা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে আমন ধানের তেমন কোন ক্ষতি হবেনা। বরং বৃষ্টির কারণে পোকামাকড় কমে যাবে। তবে সবজির জন্য বৃষ্টি অনেকটা ক্ষতি বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, যশোরে বৃষ্টিতে কী পরিমান সবজির ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে আপাতত বলা সম্ভব হচ্ছেনা।