মোঃ শহীদুল হাসান :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প ভুমিহীনদের জন্য জমিসহ বাড়ি বরাদ্দের আশ্রায়ণ প্রকল্পের খুলনা জেলায় জমিসহ ঘর দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ হাজার ৯৪টি। ইতোমধ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ২৭৩টি ঘরের। বাকী ঘর গুলোর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তবে থেমে নেই ষড়যন্ত্র। ইটের তৈরী তিন পিলারের মাঝে দুটি খুটি বসিয়ে তার ছবি ফলাও করে প্রচার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পিলারের বদলে বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরী হচ্ছে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর এমন কথা বলছে অপপ্রচারকারীরা।
সরকারি খাসজমি অথবা ব্যক্তিগত জমি ক্রয় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার বিভিন্ন স্থানে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য জমিসহ এধরনের ঘর তৈরী করে দিচ্ছেন। কোন মানুষ আশ্রয়হীন থাকবেনা স্বাধীনতার সূবর্ন জয়ন্তী ও মুজিববর্ষে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই কাজ করেছে সকল জেলা প্রশাসন। যেমনটি করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসক। সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগ কে নস্যাৎ করতে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে সমাজের একশ্রেণির পশ্চাৎপদ মানুষ। এই ষড়যন্ত্রের এমনই একটি চিত্র তুলে ধরলেন ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের আমভিটা গ্রামে আশ্রায়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া ৬নং ঘরের মালিক প্রেমদাসী সরকার।
প্রেমদাস সরকার বলেন, উত্তরের শীতের বাতাস ঠেকানো জন্য বাঁশের খুঁটিতে পর্দা টানিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছিলাম। আমি ঘরের পিলারের মাঝে ৩টি দিয়ে বাঁশের খুঁটি দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম কোন সাংবাদিক ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোন সাংবাদিক আমার সাথে কোন কথা বলে নাই। পরে লোকজনের কাছে শুনে আমি বাঁশের খুঁটিগুলো খুলে ফেলেছি।
ঋুমিহীন ও গৃহহীনরা জমিসহ ঘর পাওয়া সকলেই খুশি। তবে তাদের আরো কিছু চাহিদার কথাও জানালেন। তারা দাবি আশ্রায়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। সুপেয় পানির সংকট তাদের দীর্ঘ দিনের। সেখানে একটি রাস্তা তৈরী এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি কথা বললেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া ঘরের অধিবাসীরা।
প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পাওয়া ভবরতি মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুন্দর ঘর করে দিয়েছে। ঘর পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। ঘরে রান্নাঘর, টয়লেট দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। এখন শুধু পানির কল ও যাতায়াতের রাস্তাটা একটু ভালো করে দিলে আমাদের আর কোন সমস্যা থাকবে না।
ঘর পাওয়া দীপা সাহা বলেন, আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে অনেক খুশি। আমরা এখন পরিবার নিয়ে একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। তবে আমাদের পানির কলা আর রাস্তাটা একটু ভাল করে দিলে আমাদের আর কিছু লাগবে না।
স্থানীয় ১নং ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম জহুরুল ইসলাম বলেন “বরাদ্দ পাওয়া ঘরের মালিক তার বারান্দায় উত্তরের বাতাস সামলাতে তিনটি পিলারের মাঝে বাঁশ দিয়ে কাপড় টানিয়েছিলেন। সেই বাঁশের ছবি তুলে একটি মহল অপপ্রচার চালিয়েছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয় অপরাধ। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য একটি মহল পিলারের বদলে বাঁশ দিয়ে খুঁটি দেয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ভুমিহীনদের জন্য ঘর হোক এটা যারা চায়না তারাই এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রকল্প নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী ঘরের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলো শেষ করে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।
খুলনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: সাদিকুর রহমান খান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে। যা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি হস্তান্তর হয়নি। একটি নিউজ পোর্টালে বাঁশের খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে এমন সংবাদ শুনে সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছি। আসলে ঘটনার কোন সত্যতা নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির সমস্যা। আর যেহেতু প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি সেকারনেই রাস্তার কাজ হয়নি। তবে অতি দ্রুতরাস্তা এবং পানির সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ^স্ত করেন। ভুমিহীনদের মাঝে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৪০ টি ঘর।